সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তির নাম শেখ আনছার আলী। যিনি ঐ ইউনিয়নের আরেক আলোচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। গত সপ্তাহে জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বর্তমানে এলাকায় অবস্থান করছেন। ২ নভেম্বর শূন্য হওয়া উক্ত ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি এ প্রতিবেদককে টেলিফোনে নিশ্চিত করেছেন শেখ আনছার আলী।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শেখ আনছার আলীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোহাটি গ্রামে। ঐ গ্রামের বৃহৎ চার বাড়ি খ্যাত মরহুম শেখ ইকরাম হোসেনের পুত্র তিনি। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক ছিলেন। অবসর গ্রহণ করার পর এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ কমিটির পরিচালনা পর্ষদসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃত্ত করেন। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও লাখোয়াটী ৪ বাড়ি খ্যাত তাঁর বংশের অধিকাংশ লোকজন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। চার বাড়িতে রয়েছে ৭ শতাধিক ভোটার।
২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পরিচিতি বাড়তে শুরু করে। একই বছর ১৭ মার্চ ১ম করোনাকালীন সময়ে বারাকপুর বাজারে চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে আলোচনায় উঠে আসে তাঁর নাম। একই দিন তিনি এবং তাঁর গ্রুপের সমর্থকরা হামলা করে গাজী জাকির হোসেনের বাড়িতে। আক্রমণের শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের বড় ভাই বারাকপুর বাজার কমিটির সভাপতি গাজী নাসির উদ্দিন। পিটিয়ে তার হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বারাকপুর বাজারে হামলার শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের বেশ কয়েকজন সমর্থক। এক কথায় ঐদিন গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে বারাকপুর বাজারের তাণ্ডব চালিয়ে গাজী জাকির হোসেনের বাড়ি, সমর্থক এবং তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তিনি এবং তাঁর গ্রুপের শক্তি জানান দেন। এ ঘটনার পর থেকে ক্রমান্বয়ে অশান্ত হতে শুরু করে বারাকপুর ইউনিয়ন। গত আড়াই বছরে নিহত গাজী জাকির হোসেনের সমর্থদের সংগে তিনি এবং তাঁর সমর্থকদের একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনও তাঁর নানাবিধ ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক আলোচিত এবং সমালোচিত ছিলেন। গত ১২ জুন তিনি নৃশংস হামলার শিকার হন শেখ আনছার আলীসহ তাঁর সহযোগীদের হাতে । ৩ আগষ্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই রানা প্রতাপ ঘোষ খুলনা গেজেটকে বলেন, হত্যা মামলাসহ শেখ আনছার আলীর বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ৪ টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
এছাড়া কোর্টে তার বিরুদ্ধে ১ টি সন্ত্রাসী হামলা মামলা রয়েছে সিআর ৪৪/২১। আমলী দিঘলিয়া থানা।
ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দিঘলিয়া থানা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, বারাকপুর ইউপি’র উপ-নির্বাচনসহ জামিনে বের হয়ে আসা শেখ আনছার আলীর কর্মকান্ডের উপর আমাদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।
গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বারাকপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৯৮৮ ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকির হোসেনের কাছে পরাজিত হন। উক্ত নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি ৫ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়েছিলেন। বিজয়ী গাজী জাকির হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়েছিলেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই