নগরীর নুরনগরে খুলনার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কোন সীট খালি নেই সম্বলিত প্যানা। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার জন্য একজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়া বা তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে গুরুতর অসুস্থ অন্য রোগীদের। এই বাস্তবতায় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও খুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেনি। ফলে করোনা রোগীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, খুলনায় করোনা চিকিৎসার জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড হাসপাতালে (খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল) সীট সংখ্যা মাত্র ৮০টি। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজের ফ্লু কর্ণারের রেড জোনে আরও ১৫জন রোগীর অতিরিক্ত সেবা দিচ্ছে খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সুত্র জানায়, দেশের সকল বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি খুলনাতে। নির্দেশনার প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো কোনটিই ঠিক করা হয়নি।
এদের মধ্যে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা শুরু করতে পারেনি। গত ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি খুলনাসহ দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো। চিঠিতে ৫০ শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে এমন প্রতিটি হাসপাতালকেই নন কোভিড এর পাশাপাশি কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন (বিপিসিডিএইচওএ) সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল ক্লিনিক-এর সংখ্যা শতাধিক হলেও মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠানে ৫০ বা তার থেকে বেশি শয্যা আছে। এগুলো হলো গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আদদ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল। এর বাইরে বড় বড় কয়েকটি হাসপাতাল যেমন নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতাল, গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ৫০-এর কাছাকাছি রোগী ভর্তি রাখলেও এদের কারোই অনুমোদন ১০ বা ২০ বেডের বেশি না। তবে যে চারটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি চিঠি এসেছে তাদের কোন প্রতিষ্ঠানেরই করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনায় করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড একমাত্র সরকারি হাসপাতালে একজন চিকিৎসক একটানা ১০ দিন চিকিৎসা দেন, এরপর টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে যান। পরবর্তিতে সেখান থেকে ৭ দিন বাড়িতে সময় কাটানোর পর আবার হাসপাতালে এসে যোগদান করেন। এতে করে নিয়মিত জনবলের তিনগুণ প্রয়োজন হয়। যা কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই নেই।
যদিও খুলনায় সরকারি হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি মেটাতে ইতোমধ্যে ২২ জন চিকিৎসক ও ৯১ জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে । এছাড়া একই ভবনে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার যে কথা বলা হয়েছে তা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন হাসপাতাল মালিকরা। কোন হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি করলে অন্য রোগী সেই হাসপাতালে আসতে চাইবেন না। ফলে সাধারণ রোগীরাও সেবা বঞ্চিত হয়ে কম মানসম্পন্ন হাসপাতালে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তবে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য তাদের কার্যক্রম প্রায় শেষ করে এনেছে। যে কোন সময় তারা শুরু করতে পারবে বলে জানান হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান।
বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান বলেন, করোনা চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনা যাতে খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা পালন করতে পারে সেজন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল ও যোগানও দিতে হবে। পিসিআর মেশিন সংগ্রহ করতে হবে। কোভিড, নন কভিড নয় প্রয়োজনে সরকার পুরো হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত করতে পারবেন। কিন্তু আর্থিক ও জনবল সব ধরনের সহযোগিতা ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, কয়েকটি হাসপাতালের সাথে কথা বলে কয়েকদিনের মধ্যে তাদের সংযুক্ত করা হবে। কোন রোগী ভর্তি থাকবে সরকারি কোভিড হাসপাতালে, কিন্তু সে এইসব বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেবে। এভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে, খুব শিগগিরই এটা বাস্তবায়ন করা হবে।
খুলনা গেজেট/বশির