খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত
  খুলনার ফুলতলা উপজেলায় সুমন মোল্লা নামের একজনকে গুলি করে হত্যা

বটিয়াঘাটার ভাসমান রেস্টুরেন্ট নজর কাড়ছে সবার(ভিডিও)

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

নদীতে স্রোত বইছে, সঙ্গে বাতাস। তীরে গড়ে ওঠা চরে ধীরে ধীরে বাড়ছে পানি, করছে ছুঁইছুঁই। এর সঙ্গে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকা ১০০ প্লাস্টিকের ড্রাম ভেসে উঠছে। আর ড্রামের ওপর গড়ে তোলা সুসজ্জিত ১০ কক্ষবিশিষ্ট একটি রেস্টুরেন্টও ভেসে উঠছে পানির ওপর। মাঝেমধ্যে বাতাস বইলে বা নদীতে জলযান গেলে সৃষ্ট ঢেউয়ে দোল খাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে শুকনা চরের বালু নদীর জোয়ারের পানিতে লুকিয়ে গেল।

এমনই এক মনোরম ও চোখ জুড়ানো দৃশ্যের দেখা মিলেছে খুলনার বটিয়াঘাটার শোলমারী সেতুর নিচে কাজীবাছা নদীতে।

সম্প্রতি এই নদীতে চালু করা হয়েছে ভাসমান একটি রেস্টুরেন্ট। প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠ, টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রেস্টুরেন্ট। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, নামটিও চমৎকার। নজরকাড়া এই রেস্টুরেন্টের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেঘবিন্দু ভাসমান রেস্টুরেন্ট’।

দৃষ্টিনন্দন এই ভাসমান রেস্টুরেন্ট দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে ভ্রমণপিপাসু মানুষ। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একনজর দেখতে ও ক্যামেরাবন্দী করতে শোলমারী সেতুর ওপরে ও নিচে ভিড় জমাচ্ছে। পাশাপাশি ভাসমান এই রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা জমাচ্ছে। কিনছে পছন্দের খাবার ও পানীয়। বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীরা এখানে আসছেন।

জানা যায়, বটিয়াঘাটায় কাজীবাছা নদীতে ১৫ এপ্রিল মেঘবিন্দু ভাসমান রেস্টুরেন্টটি চালু করা হয়। বর্তমানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রেস্টুরেন্টটি। ১০০টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর ১০টি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। পানির স্রোতে ড্রামের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল। হেঁটে যাওয়ার জন্য অ্যাঙ্গেলের ওপর কাঠের মাচা তৈরি করা হয়েছে। টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। প্রতি কক্ষে ছয়জন করে ১০টি রুমে একসঙ্গে ৬০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে ভাসমান এই রেস্টুরেন্টে।

বটিয়াঘাটার জলমার এলাকার বাসিন্দা মেঘনাথ সরকার ও তার চাচাতো ভাই শিবেন্দু কবিরাজ এই রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করছেন। তারা দুজনই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করার উদ্দেশে এই রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন।

সরেজমিনে ভাসমান রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, রেস্টুরেন্টটি খোলার পর আস্তে আস্তে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ঘুরে দেখছে, সেলফি তুলছে। কেউ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। আবার অনেকে রেস্টুরেন্টে বসে চা-কফি, পানীয় ও ফাস্টফুড খাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বাতাস বইছে আর নদীতে জলযান গেলে সৃষ্ট ঢেউয়ে দোল খাচ্ছে রেস্টুরেন্ট। মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সেখানে। মানুষের নজর কাড়তেই ভাসমান এই রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে।

ভাসমান রেস্টুরেন্ট মালিক মেঘনাথ সরকার জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। বৈশাখের শুরুতেই রেস্টুরেন্টটি চালু করা হয়। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০০টি প্লাস্টিকের ড্রাম। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। এখানে ১০টি ঘর করা হয়েছে। আরও চারটি ঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। ১৪টি ঘর হলে রেস্টুরেন্টটি পূর্ণতা পাবে।

মেঘনাথ সরকার বলেন, ইউনিক আইডিয়ার ধারাবাহিকতায় রেস্টুরেন্টটি করা। যশোরে ভাসমান সেতু দেখে ভাসমান রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। সে অনুযায়ী এই রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এটি মানুষের নজর কেড়েছে। রেস্টুরেন্টটি নদীর চরে করা হয়েছে। জোয়ারের সময় এটি পানির ওপর ভেসে থাকে। আবার ভাটার সময় নেমে যায়।

ছোট পরিসরে হলেও রেস্টুরেন্টটি ‘ইউনিক’। খুলনা বিভাগে এ ধরনের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসছে, জানান তিনি।

ক্রেতার আগমন দেখলে মনে হয় না যে মাত্র কয়েক দিন শুরু করেছি। মনে হয় বছর গড়িয়েছে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টটি খোলা রাখি। বিকেল ৪টার পর থেকে রেস্টুরেন্টে কাস্টমারের সংখ্যা বেড়ে যায়। নদীর একটি ত্রিমোহনা আছে, পাশেই সেতু। সেতু ওপর থেকে দেখতে ভালো লাগবে, এ জন্যই এখানে করা। পণ্যের দাম সামঞ্জস্য রেখেছি, যে কারণে সব শ্রেণির ক্রেতা আসছে। পানীয়, চা, চার ধরনের কফি, কিছু চায়নিজ আইটেম বিক্রি শুরু করেছি। ঈদে সব ধরনের চায়নিজ আইটেম দিতে পারব বলে আশা করছি।

রেস্টুরেন্টে ঘুরতে আসা এক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আনিন ইসলাম বলেন, এখানে ভাসমান একটি রেস্টুরেন্ট হয়েছে শুনেছি। আজ খুলনা শহরে যাওয়ার পথে এখানে ঘুরতে এলাম। এসে নদীর পাড়ের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর লাগছে৷ রেস্টুরেন্টটি সম্পূর্ণটা পানির ওপরে। তাই অনেক সুন্দর লাগছে। পানিতে দোল খাচ্ছে, বাতাস আছে এ জন্য অন্য রকম এক অনুভূতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।

দাকোপ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা ঘোষ প্রতিবেদককে বলেন, এই পথ দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যেতে এটা দেখি। কিন্তু আসা হয় না। জোয়ার থাকায় আজ সহকর্মীদের সঙ্গে এলাম। আসার পর দেখলাম দূর থেকে যেমন দেখতে, কাছে এসে আরও সুন্দর লাগছে। পরিবেশটাই অনেক সুন্দর। জলের মধ্যে ভাসমান রেস্টুরেন্ট দেখে ভালোই লাগছে। এখানে কফি খেলাম, দামও ঠিকঠাক আছে। রেস্টুরেন্ট তো অনেকই আছে, কিন্তু এখানের পরিবেশটা বিশেষ আকর্ষণীয়।

প্রথম শ্রেণির ছাত্র মুগ্ধজিৎ মন্ডল পরিবারের সঙ্গে এসেছে ভাসমান রেস্টুরেন্টে। সে বলে আমি এখানে নদীর ওপরে ড্রামে ভাসছি, মজা করছি। মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।

নগরীর হাফিজনগর এলাকার বাসিন্দা অনুপ মন্ডল বলেন, প্রতিদিন দাকোপ যাওয়ার পথে রেস্টুরেন্টটি দেখি। সুন্দর লাগে। আজ নামলাম এখানে। পরিবেশটা খুব ভালো। মানুষ নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ব্যস্ত শহরে, মানুষের ভিড়ে সময় কাটানো যায় না। এখানে মানুষের এসে ভালো লাগবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!