সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের মরিচ্চাপ নদীর ওপরে বাঁকড়া ব্রিজ তৈরির পাঁচ মাসের ব্যবধানে মাঝ থেকে ভেঙে যায়। এরপর ১৪ মাস পার হলেও এখনো সংস্কার হয়নি সেতুটির। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ।
ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত ভোগান্তিতে রয়েছে পার্শ্ববর্তী তিনটি উপজেলার ৪০টি গ্রামের প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বলছেন, ব্রিজটি তাদের তত্ত্বাবধায়নে তৈরি হলেও অপরিকল্পিত নদী খননের জন্য অল্প দিনে ধসে গেছে। ব্রিজের রাস্তাটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে থাকায় সেখানে সংস্কার করার দায়িত্ব তাদের।
অপরদিকে, এলজিইডির কর্মকর্তা বলছেন, যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে কাজটি করেছিল তাই সংস্কার করার দায়টা তাদের ওপরে যায়। এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে দুই পারের তিন উপজেলার ৪০ গ্রামের মানুষ।
আশাশুনি প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্য মতে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মরিচ্চাপ নদীর ওপর বাকড়া এলাকায় ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ৫ জুলাই ভোরে সেতুটি ভেঙ্গে যায়। এর মধ্য প্রায় ১৪ মাসের বেশি সময় পার হলেও সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর দায় নিতে চায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান জানান, এতটা সময় পার হলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেউ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী খনন করা হয়। এ সময় সেতুটির দুই পাশ থেকে গভীর করে মাটি কাটা হয়। তার ফলশ্রুতিতে কয়েক দিনের মধ্যেই সেতুটি মাঝ বরাবর ভেঙ্গে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
স্কুল শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন জানান, প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পারাপার হতে হয়। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাছাড়া মালবাহী ভারী যানবাহনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। এক বছরের বেশী সময় ধরে এভাবে থাকলেও কেউ সংস্কার করছে না।
শোভনালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দীক জানান, ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে পরির্দশন করা হয়। এরপর অনেক সময় পার হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যেহেতু প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াত সেটা বিবেচনা করে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে ইটের খোয়া দিয়ে চলাচলযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. নাজিমুল হক বলেন, ব্রিজ করার আগে থেকে রাস্তাটি এলজিইডির সড়ক। তবে যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে কাজটি করেছিল। তাই সংস্কার করার দায়টা তাদের ওপরে যায়।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খান বলেন, যখন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল তখন ব্রিজের দুই পাশের কাচা রাস্তা ছিল। পরে দুই পাশের রাস্তাটি এলজিইডির আওতায় যায় এবং পাকা হয়। সেক্ষেত্রে যদি ব্রিজটি সংস্কার কিংবা পুনরায় নির্মাণ করতে হয় সেক্ষেত্রে সেটা এলজিইডি করবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ