অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সফলতা পেয়েছেন খুলনার চাষিরা। এতে একদিকে পতিত জমি আবাদের আওতায় আসার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ছে, লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। অপরদিকে, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সহায়তা হচ্ছে।
তিন বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের পাটুলীয়া গ্রামের কৃষক মিতা রানী। এর আগে লবনাক্ততার ফলে শুষ্ক মৌসুমে ওই জমিতে কোন ফসল হত না। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে সেখানে জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
মিতা রানী বলেন, কৃষি অফিস থেকে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দিয়ে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। গাছে ফুল আসা শুরু করেছে। লবনাক্ততার মধ্যেও গাছ অনেক বড় হয়েছে। ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
একই গ্রামের আরেক কৃষক কার্তিক স্বর্ণাকার বলেন, আমাদের পাটুলিয়া বিলে বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র আমন ধান চাষাবাদ করতাম। পার্শ্ববর্তী খালে লবণ পানি উত্তোলন করায় গ্রীষ্ম মৌসুমে কিছু চাষাবাদ করা সম্ভব হত না। তবে এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথম সূর্যমুখী আবাদ করেছি। দেরিতে রোপণ করায় কেবল ফুল আসা শুরু করেছে। আশা করছি লবনাক্ততার মধ্যেও ভালো ফলন পাবো।পার্শ্ববর্তী খালে লবণপানি উত্তোলন বন্ধ করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হলে সহস্রাধিক বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন।
পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালী বিলের ৬৫ বিঘা জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতিতে লবনপানির মৎস্য চাষ করা হত। গেল বছর সেখানে লবণ পানির ঘের বন্ধ হয়। এ বছর ওই বিলের ঘেরের পাড়ের উপর দিয়ে সূর্যমুখী চাষ করে অনেক ভালো ফলন পেয়েছেন চাষিরা। ওই বিলের চাষি মো: জিল্লুর রহমান বলেন, আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে সূর্যমুখী রোপণ করি। প্রতিটি গাছে অনেক বড় আকারের ফুল হয়েছে। লবনাক্ত এলাকায় এমন ফলন হবে এটা আশাও করিনি।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, চলতি মৌসুমে খুলনা জেলায় সর্বমোট ১৮৫৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। তন্মাধ্যে ২১৫ হেক্টর অনাবাদি পতিত জমি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছা ও কয়রায়। পাইকগাছা উপজেলায় ৬২ হেক্টর পতিত জমিতে ও কয়রা উপজেলায় ৫১ হেক্টর পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।
এছাড়াও খুলনা শহরের বয়রাস্থ মিতালি কলোনি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে, কয়েকটি বন্ধ কোম্পানীর আঙ্গিনা, লবনণচোরা, বয়রাসহ বিভিন্ন অনাবাদি জমিতে এবছর সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কোন কোন এলাকার সূর্যমুখী উত্তোলন করা হয়েছে। তবে দেরিতে আবাদ করায় কোন কোন এলাকায় এখনও ফুল আসেনি। সূর্যমুখী চাষিদের কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাইমুর রহমান বলেন, পাটুলিয়া গ্রামের প্রতিটি পরিবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ এলাকায় আমন ধান উত্তোলন করতে দেরি হয়। এজন্য আমন কাটার পরে সূর্যমুখী আবাদ করতে দেরি হয়েছে। এখন ফুল আসা শুরু করেছে। বড় বড় ফুল দেখে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন এ এলাকার অনেক চাষি।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল হার্টের জন্য ভালো। সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষিরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় ও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় এ উপজেলায় অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এবার খুলনায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম