খুলনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড হাসপাতাল অবশেষে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা। শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য স্বতন্ত্র আধুনিক প্যাথলজির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে পোর্টেবল এক্সরে ও ডায়ালসিস মেশিন স্থাপনের। সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের আইসিইউ সেবার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে চালুর চার মাসের মাথায় হলেও পূর্ণাঙ্গ একটি করোনা হাসপাতাল পাওয়ার প্রক্রিয়ায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল খুলনায় করোনা চিকিৎসার জন্য নগরীর নুর নগরে ডায়াবেটিক হাসপাতালকে সংযুক্ত করা হয়। একশ’ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে অর্ধশতাধিক। তবে সংকটাপন্ন রোগীদের সেবা দিতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে হিমশিম খেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র অক্সিজেন নির্ভর চিকিৎসা ও রোগীর অন্যান্য রোগ নির্ণয়ের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যুর হার বেশি ছিল বলে মনে করেন সিনিয়র চিকিৎসকরা।
এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা, যা দিয়ে একজন সংকটাপন্ন করোনা রোগীকে উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করে তার সেচুরেশন ঠিক রাখা হয়।
রবিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত করোনা হাসপাতালে ৭টি হাইফ্লো মেশিন সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের কিডনি বিকল থাকলে জীবন বাঁচাতে বিকল কিডনির ডায়ালসিস অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু এ ব্যবস্থা রাজধানীর কয়েকটি অত্যাধুনিক বেসরকারি হাসপাতালের সাথে সরকারি শুধুমাত্র কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ছাড়া কোথাও ছিল না। কিন্তু আজ রবিবার থেকে খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের নীচ তলায় ডায়ালসিস মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ডায়ালসিস সেবা দেয়া শুরু করতে আশাবাদী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে প্যাথলজি বিভাগ।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের কোমারবিডি বা বিভিন্ন অসুখের ডায়াগনসিস এর জন্য এতোদিন ব্যবস্থা না থাকলেও খুলনা মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ মাহবুব রোশেদ এর নেতৃত্বে আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করোনা হাসপাতালেই করাতে পারবেন রোগীরা।
করোনা রোগীদের সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় ফুসফুস। চিকিৎসা চলাকালীন বুকের এক্সরে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতোদিন করোনা হাসপাতালে কোন পোর্টেবল এক্সরে মেশিন না থাকলেও এখানে একটি মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আবু নাসের হাসপাতালের দুইজন মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে এক্সরে করার জন্য। চলতি সপ্তাহ থেকে রোগীদের এক্সরে করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সমন্বয়কারী ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের কাছে এর থেকে বেশি দুখের আর কিছু নেই। এতোদিন চোখের সামনে অনেক রোগী মারা গেলেও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে শেষ চেষ্টাটাও করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বর্তমানে ১০টি আইসিইউ বেড ভেন্টিলেটরসহ, ৭টি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, আধুনিক প্যাথলজি ল্যাব, লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট ও ডায়ালসিস স্থাপনের কাজ চলছে। এখন থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতালে পরিণত হবে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, এই আশা করি। এছাড়া সংকটাপন্ন রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য সরকার প্রশিক্ষিত আইসিইউ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে, আশাকরি খুলনার মানুষ পরিপূর্ণ সেবা পাবে।
খুলনা গেজেট /এমবিএইচ/ এমএম