পাইকগাছার কপিলমুনির সলুয়ায় ডোবা থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত যুবকের লাশের পরিচয় দাবি করেছে তার স্বজনরা। দাবি অনুযায়ী তার নাম ইব্রাহিম মোড়ল, বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে। তার এনআইডি নং-২৮৫২৪৪৯৩৩৪। সে ঐ এলাকার কাচের আলী মোড়লের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বাড়ি থেকে যশোরে একটি ইট ভাটায় কাজ করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় সে।
তার বড় ভাই দাবি করে ইসমাইল হোসেন জানায়, তিনি দীর্ঘ দিন শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। গত ৯ নভেম্বর ভিটা বাড়ির জায়গা-জমি সংক্রান্তে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পি-১১৮১/১৮ (তালা) মামলায় ধার্য দিনের কথা জানান দিতে তিনি ইব্রাহীমকে ৪ নভেম্বর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিচ্ছিলেন। তবে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারেন যে, সে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে যশোরে গেছে।
এরপর ৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে জনৈকা মহিলা তাকে তাদের এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের লাশ উদ্ধারের কথা জানায়। লাশের বিবরণ ও পরিধেয় কাপড়ের বিবরণ শুনে তিনি ঐ দিনই কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়িতে তার ভাইয়ের একটি ছবিসহ হাজির হন। এরপর ফাঁড়ি থেকে উদ্ধারকৃত লাশের ছবি দেখে তার ভাইয়ের লাশ বলে শনাক্ত করেন। তবে পুলিশের পক্ষে হত্যার ক্লু উদঘাটনের সুবিধার্থে বিষয়টি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করা হয়। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও পুলিশি অগ্রগতির কোন আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পাওয়ায় বিচলিত হয়ে পড়েন তারা।
এক পর্যায়ে ইসমাইল মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাল্টুকে সাথে নিয়ে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়িতে উপস্থিত হন। এসময় তারা নিহত ইব্রাহিমের হত্যাকারীদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার পাশাপাশি তার লাশটি ফেরৎ চান।
এব্যাপারে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি লাশের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, হত্যার ক্লুসহ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে লাশের পরিচয় জানাতে বিলম্ব হচ্ছে।
এব্যাপারে খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ইসমাইলকে সাথে নিয়ে বিষয়টির বিস্তারিত জানতে মঙ্গলবার দুপুরে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্দুল আলীমের সাথে কথা বললে তিনি তাদেরকে ঘটনার মোটিভ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে বলে কয়েক দিন ধৈর্য ধরতে বলেন। পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক বলেও দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে পাইকগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, স্বজনদের মাধ্যমে লাশটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তবে হত্যার মোটিভ বা ক্লু উদঘাটনে কিছুটা সময় নিচ্ছেন। বিশেষ করে নিবিড় তদন্তের স্বার্থে এখনি বিষয়টির জানান দিচ্ছেননা।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর বেলা ১১ টার দিকে পাইকগাছা থানা পুলিশ উপজেলার কপিলমুনির সলুয়া এলাকার একটি মাঠের মধ্যে ডোবা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় লাশটি উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের ন্যায় ঐদিন সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ক্ষেত পরিচর্যায় ক্ষেত মালিক আছাদুল ইসলাম সেখানে গিয়ে ভাসমান লাশটি দেখে প্রথমে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ি ও পরে থানা পুলিশে খবর দেন। পরে বেলা ১১ টার দিকে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
উদ্ধারের সময় ভাসমান উলঙ্গ অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। এসময় উলঙ্গ লাশের গায়ে কালো রঙের মোটা কাপড়ের গেঞ্জি ও ভেতরে লাল রঙের গেঞ্জি ছিল।
এসময় পুলিশ লাশের অনতিদূরে ক্ষেতের মধ্য থেকে ১ টি জুতা, বিস্কুট, চানাচুর, পকেট টিস্যু, শ্যাম্পুর খালি প্যাকেট উদ্ধার করে। সর্বশেষ বুধবার (১৭নভেম্বর) দুপুরের দিকে নিহতের ভাই ইসমাইল মোবাইলে জানায়, ভাইয়ের লাশ দাবির প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ তাকে আদালতের আশ্রয় নিতে বলেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, কেউ বা কারা তাকে পরিকল্পিতভাবে বাইরে থেকে সেখানে নিয়ে হত্যা শেষে লাশ ঐ ডোবায় ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারে।
খুলনা গেজেট/ এস আই