খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
অনিশ্চয়তায় সাদা সোনা চাষিদের স্বপ্ন

পাইকগাছায় চিংড়ি-ধান সমন্বয় চাষে ঘের ও জমি মালিকদের মতবিরোধ

পাইকগাছা প্রতিনিধি

খুলনার পাইকগাছায় মৎস্য চাষি ঘেরমালিকরা অবস্থান নিয়েছেন লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের পক্ষে। অন্যদিকে মিষ্টিপানিতে একই সাথে ধান ও চিংড়ি সমন্বয় চাষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জমি মালিকরা। এ মতবিরোধে চিংড়ি চাষি সমিতি তাদের সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর সভা-সমাবেশ করেছে।

অপরদিকে মিষ্টিপানিতে ধান চাষ ও চিংড়ি সমন্বয় চাষের পক্ষে জমির মালিকরা সম্মিলিতভাবে পাইকগাছা-কয়রার (খুলনা-০৬) সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

এর আগে চিংড়ি চাষি সমিতির নেতারা গত ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পাইকগাছা-কয়রার সাংসদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় চিংড়ি চাষের নানাবিধ সুফল উল্লেখ করেন।

এসময় তারা উল্লেখ করে বলেন, চিংড়ি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বড় অংশ চিংড়ি থেকেই আসছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষ বন্ধ হলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাঁকড়া, মৎস্য কাটার হাজারো ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন।

এ সময় উপস্থিত উপজেলার প্রায় সকল ইউপি চেয়ারম্যানরা মিষ্টিপানিতে ধান ও চিংড়ি সমন্বয় চাষের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, সারা বছর লবণপানি জমিতে ধরে রেখে চিংড়ি চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এলাকার গাছপালা মরে যাচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মিষ্টিপানির মাছ বিলুপ্ত প্রায়।

তারা আরও বলেন, লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের ফলে পানির ঢেউয়ে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা ও কাঁচা রাস্তা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত ঘেরমালিকরা ওয়াপদার রাস্তা কেটে নষ্ট করছেন। রাস্তা কেটে পাইপ ঢোকানো হচ্ছে, আর সেখানে নিচু হয়ে নদীর জোয়ারের জল প্রবেশ করে ওয়াপদা ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে নানা ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

উপজেলার গড়ইখালী ও দেলুটির দুটি পোল্ডারে গেল মৌসুমে লবণ পানি না ঢোকানোয় তরমুজ, তিল, ও সবজি চাষে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করতে পেরেছেন কৃষকেরা। এতে করে একদিকে জমির উর্বরতা ও মাটির গুণাগুণ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকেরা ও জমির মালিক ফসল ফলিয়ে কৃষিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার পাশাপাশি নিজেরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তারা।

এদিকে লবণপানিতে চিংড়িঘের ও মিষ্টিপানিতে ধান এবং মৎস্য চাষ হবে কি না! এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম কে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১০ জন।

এ ব্যাপারে পাইকগাছা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ বলেন, আধুনিক পদ্ধতি ও পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করলে জমিতে লবণ পানি ঢোকানোর প্রয়োজন হবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলার সোলাদানা, গদাইপুর, দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে আশির দশক থেকে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকায় চিংড়িঘেরের মাটি দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মাটির অনুজ। জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তাই ওই অঞ্চলে লবণ পানি না ঢোকানোই সবদিকদিয়ে ভাল হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ মতাজ বেগম বলেন, লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের ব্যাপারে অতিদ্রুত কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!