শিক্ষা সংস্কৃতির দিক থেকে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটির ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সেনহাটি ভৈরব নদীর তীরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও (যেটি সম্প্রতি সরকারিকরণ হয়েছে) উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকায় কোন কলেজ হয়নি। ‘৯০ দশকের পর থেকে সেনহাটি তে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে।
প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান মল্লিক মহিউদ্দিনকে সভাপতি এবং এম সিদ্দিক উজ্জামান কে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় কলেজ বাস্তবায়ন পরিষদ। এ বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগেই ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেনহাটী কলেজ। প্রতিষ্ঠার এক বছর পর কলেজটির নামকরণ পরিবর্তন করে আলহাজ্ব সারোয়ার খান কলেজ করা হয়। যে নামকরণ এখনো বহাল রয়েছে।
প্রায় পাঁচ একর জায়গার ওপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম পরিবেশে কলেজটি অবস্থিত। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে। এইচএসসি এবং ডিগ্রী পাস ছাড়াও কলেজটিতে পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া কলেজটিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী কোর্স এবং কারিগরি কোর্স চালু রয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ এবং মান খুবই সন্তোষজনক। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কলেজটি থেকে ২৮৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৮১ জন। পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ২৯।
ইতিহাস বিষয়ে ১জন পিএসডি এবং বাংলা বিষয়ে ২ জন এমফিল শিক্ষকসহ বর্তমানে কলেজটিতে ৭৪ জন শিক্ষক পাঠদান করছেন। এর মধ্যে ২৭ জন সহকারী অধ্যাপক।
২০২১ সাল থেকে কলেজটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ আলতাফ হোসেন। ইতিপূর্বে একই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বর্তমান কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নির্দেশনা মোতাবেক এবং কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের সহায়তায় গত এক বছরে তিনি প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন যেটি খুবই প্রশংসনীয়।
পুরাতন প্রশাসনিক ভবনটি নতুনত্ব রূপ নিয়েছে। শেখ রাসেল ভবনের একই রূপ নিয়েছে। ছাত্রীদের জন্য স্বতন্ত্র কমনরুম (আঙ্গিনা সহ) তৈরি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের শোভাবর্ধনে পুষ্প সম্ভার করা হয়েছে। সামাজিক বনায়ন তৈরি করা হয়েছে।
কলেজ লাইব্রেরীটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ভবনের পাশেই মসজিদের উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন সহ পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু মঞ্চের পেছনে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
উল্লেখিত সকল উন্নয়ন করা হয়েছে কলেজের তহবিল থেকে। এ সকল উন্নয়ন কাজ যাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয় সে জন্য তৈরি করা হয়েছে অর্থ নিরীক্ষা ও ক্রয় কমিটি। তিন কমিটির অনুমোদনের পর কলেজের সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেন। ম্যানেজিং কমিটির মিটিং এর নাস্তার খরচের ব্যয় ভারও পর্যায় ক্রমে কমিটির সদস্যদের বহন করতে হয়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আলতাফ হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, আলহাজ্ব সারোয়ার খান কলেজ হবে একটি মডেল কলেজ। খুলনা জেলার ভেতর এটি হবে ১টি আদর্শ কলেজ। এই কলেজ থেকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ছাত্র/ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিরে যাবে এই প্রত্যাশা নিয়ে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুনীর আহমেদ এর পরামর্শ এবং নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, নয়নাভিরাম পরিবেশে অবস্থিত কলেজটির ক্যাম্পাসে গেলে যে কেউ বিমোহিত হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কলেজটি সরকারিকরণের।