১৯ নভেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর শ্যামনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম যুদ্ধে মুক্ত অঞ্চল হওয়ার গৌরবান্বিত হয় শ্যামনগরবাসি।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকালে শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের যৌথ আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য দান, বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, লাঠিখেলা, জারিগানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শ্যামনগর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সকালে উপজেলা সদরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হল রুমে আলোচনা সভায় গিয়ে মিলিত হয়। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ উজ জামান সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অধ্যক্ষ জি এম ওসমান গণি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দেবী রঞ্জন মন্ডল, সাবেক কমান্ডার এম এ মজিদ, শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী শহিদুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি এস এম কামরুল হায়দার নান্টু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দেবী রঞ্জন মন্ডলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা শ্যামনগর। এটি নতুন প্রজন্মকে অবহিত করতে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর কর্মসুচি গ্রহণ করা ও উদ্যাপন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি রেজুলেশন করে ইউনিয়ন পর্যায়েও উদ্যাপন করার বিষয়ে দাবী জানান বক্তারা। সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা পর্যায়ে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সৎকারের জন্য নির্ধারিত কবর স্থান ও শশ্মান স্থান নির্ধারণের জোর দাবি জানান।
অনুষ্ঠান শেষে শ্যামনগর মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও সন্তান কমান্ডের সদস্যদের মধ্যে ২৫০টি শীত বস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৯ আগষ্ট পাক বাহিনীর আক্রমনে প্রাণ হারায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে সুবেদার ইলিয়াস, আবুল কালাম আযাদ প্রমুখ। এ দিনে আরো কয়েক জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। এ আক্রমণের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। টানা তিন মাসে পাক বাহিনী শ্যামনগর সদরে ৫/৬ বার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ও ১৮ নভেম্বর রাতের আঁধারে শ্যামনগর ত্যাগ করে। পর পরই মুক্তিযোদ্ধারা এসে শ্যামনগর দখল নেয়। এরপর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই