খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান গ্রেপ্তার
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২২৫
  পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ আলমের নিয়োগ বা‌তিল : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দেবহাটার বাগদা-গলদা রেণুর বাজারে তান্ডব, গাড়িতে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারিভাবে ইজারা দেয়া কুলিয়ার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনার বাজারে তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, রোববার (৩ এপ্রিল) ভোররাত রাত ২টার দিকে বিজিবি’র সোর্স পরিচয়দানকারী সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান কলেজ মোড় এলাকার ৪-৫ জন যুবককে সাথে নিয়ে বিজিবি ঝাউডাঙ্গা ক্যাম্পের সদস্য মিজান এবং বাঁকাল চেকপোস্টের মহাসিনের পরিচয় ব্যবহার করে এই হামলা করা হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে এবং আইনশৃঙ্খলা সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের গন্ডি পেরিয়ে বিজিবি নীলডুমুর ১৭ ব্যাটালিয়নের আওতাভুক্ত দেবহাটার কুলিয়াতে গলদার রেণু পোনার বাজারে ঢুকে বেআইনীভাবে এই তান্ডব চালানো হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এসময় তারা জোরপূর্বক তালা ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি মাছের ঘরে হামলা, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ঘুমন্ত মাছ ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে জখম করেন। তাদের পিটুনিতে ঘুমন্ত গলদার রেণু ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদসহ বেশ কয়েকজন আহত হলে ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন বিজিবি সদস্য পরিচয়দানকারীরা। একপর্যায়ে সেখানে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসময় গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়লে আশু মার্কেট এলাকায় থাকা সোর্স নামধারী ব্যক্তিদের বহনকারি একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন প্রাইভেটকারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।

এদিকে খবর পেয়ে রাতেই দেবহাটা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত মাছ ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিক-শ্রমিকদের শান্ত করেন।

তাৎক্ষণিক সখিপুর ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন জ্বলন্ত প্রাইভেটকারটির আগুন নিয়ন্ত্রণ ও সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মাহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

এদিকে বিজিবির সোর্স নামধারীদের হামলায় গুরুতর আহত গলদার রেণু ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদকে উদ্ধার করে রাতেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দেবহাটার কুলিয়া মৎস্য ও রেণু সেডের একাধিক আড়ৎ মালিক জানান, যুগ যুগ ধরে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ইজারা নিয়ে কুলিয়া মৎস্য ও রেণু সেডটিতে দেশীয় বিভিন্ন নদ-নদী থেকে আহরিত এবং হ্যাচারিতে উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনার ব্যবসা করে আসছেন তারা। গেল দু’বছর সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ৮-১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুলিয়া রেণু বাজারের বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ ও বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই কেবলমাত্র ‘ভারতীয়’ আখ্যা দিয়ে জব্দ ও বিনষ্ট করে রেণু ব্যবসায়ী, ঘের মালিক, মৎস্য চাষী এবং বাজারের ইজারা গ্রহীতাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিসাধন ও হয়রানি করে আসছে কিছু বিজিবি সদস্যরা।

তারা আরো জানান, সম্প্রতি রেণু পোনা ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষী, ঘের মালিক, বাজারের ইজারা গ্রহীতাদের ক্ষতিসাধনের হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। আইন শৃঙ্খলা সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা ব্যতীত বিশেষ করে কুলিয়া মৎস্য সেডে সুস্পষ্ট প্রমাণ বা বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষা কিংবা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গলদার রেণু পোনা জব্দ বা বিনষ্ট না করতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ বিজিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ সেই নির্দেশনা লংঘন করে বিজিবি সদস্য পরিচয়ে রোববার ভোর রাতে অতর্কিত রেণু পোনার বাজারে ঢুকে তান্ডব চালানোর পাশাপাশি মাছের ঘর, আসবাব পত্র ভাংচুর এবং আবু সাঈদসহ কয়েকজন আড়ৎ মালিক ও ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম করা হয়।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিজিবি ও তাদের সোর্সদের সাথে কুলিয়ায় রেণু বাজারের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মারপিটের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ। একই সময়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কুলিয়া ব্রীজ ও রেণুর বাজার থেকে প্রায় এক হাজার গজ দূরত্বে আশু মার্কেট অভিমুখে জলন্ত একটি প্রাইভেট কারে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান ওসি।

এদিকে, এসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে ঝাউডাঙ্গা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্য মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এবিষয় তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!