খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
দুর্বল বাঁধ ভেঙে কয়রার ৩৫ গ্রামে লোনা পানি

জোয়া‌রে আরও এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত

তরিকুল ইসলাম

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা আইলা-আম্পানে চরম ক্ষতিগ্রস্থ কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম নদীর লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর তেমন কোন তান্ডবের দেখা না মিললেও কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্বল বেড়িবাঁধের কমপক্ষে ৮টি পয়েন্ট ভেঙে ও অর্ধ শতাধিক স্থান থেকে উপর দিয়ে উপচে গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। লোনা পানি প্রবেশ করায় লোকালয়, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। বাড়ি ঘরে জোয়ারের পানিতে আসায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে, ইয়াসের তান্ডবের ভয় কেটে গেলেও এখনও এ এলাকার মানুষের কাটেনি বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা। রাতের জোয়ারে আরও এলাকার দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এলাকবাসি। এছাড়া যেসব এলাকায় ইতিমধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে, ভাটিতে পানি কিছুটা নেমে গেলেও রাতের জোয়ারে ঘর-বাড়িসহ সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কিনা এ চিন্তায় বিভোর তারা।

বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে কয়রা উপকূলে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ৮টার পরপরই সূর্যের দেখা মেলে। এরপর কখনো গুড়ি গুড়ি আবার কখনো ঝড়ো বৃষ্টি। ফের রোদ। এভাবেই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে। এরপরই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হয়। উত্তাল ঢেউ এসে আঘাত করে দূর্বল বেড়িবাঁধে। প্রবল বেগে ঝড় না হলেও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে লোকালয়ের দিকে নদীর পানি ধেয়ে আসতে থাকে। দুপুরের আগেই উপকূলবর্তী এলকার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে ঝড়ে কোথায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কয়রা উপজেলার দশহালিয়ার তিন কিলোমিটার, মঠবাড়ি, তেতুলতলার চর, আংটিহারা, মটবাড়ী, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহসিল অফিসসংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশির হাটখোলা, কাটমারচর, ২ নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পবনা, কাশির খালের গোড়া, হোগলা, উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী, শাকবাড়িয়া, সুতির অফিস, নয়ানি, খোড়ল কাটি, জোড়শিংসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে মানুষ আশ্রয় নেননি। তবে প্লাবিত হওয়ার পরে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনসহ করনীয় নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করেছেন।

মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও পাশ্ববর্তী গ্রামের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতের জোয়ারে আরও বিপদ বাড়তে পারে। ভেসে যেতে পারে বাঁধ থেকে দূরবর্তী গ্রামও। তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে টেকসই বাঁধের দাবি করে আসলেও আজো দেখা মেলেনি। এছাড়া আম্পানের পর থেকে সেখানকার ৫/৬ কিমি বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও কোন রকমে দায় এড়ানোর মত মাটি দেয়া ছাড়া তেমন কোন কাজ করা হয়নি।

সদর ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকার আঃ গণি বলেন, ঝড়ে বেশ কয়েক দফা ঘর ভেঙেছে। আম্পানেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমাদের পাশবর্তী কোন সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় আমাদের বাঁধের উপর অবস্থান করতে হয়।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দশহালিয়া গ্রামে সকাল থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দূর্বল ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় লোকালয়। তিনি আরও বলেন, এখানকার বাঁধ সংস্কারের জন্য চেষ্টা করেও যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কাজের অনুমতি না মেলায় আজ এ অবস্থা হয়েছে।

উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানী জানান, শাকবাড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা, কাটমারচর, কাশির হাটখোলা, হরিয়ারপুর গাতির ঘেরী এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে চিংড়ি ঘেরে প্রবেশ করছে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমরা পানি আটকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম বাহারুল ইসলাম জানান, আম্পানের আঘাতে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, গোবরা ঘাটাখালী, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে যায়। অম্পানের সে ক্ষতি মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর অবার প্লাবিত হলে কয়রা ইউনিয়ন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তিনি কয়রাবাসীকে রক্ষা করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

খুলনার কয়রা উপজেলার পিআইও সাগর হোসেন সৈকত খুলনা গেজেটকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে কতগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ৩০ থেকে ৩৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ভাটিতে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে। সাইক্লোনে শুকনা খাদ্য পৌছে দেয়া হচ্ছে।

পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, কয়রা উপজেলার ২৬টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাতাসের তীব্রতা বাড়ার কারণে বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধ মেরামতে কাজ চলছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ভেঙে যাওয়া বেঁড়িবাধের স্থানগুলো পরির্দশনকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সার্বিক সহযোগিতায় আশ্বাস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্রুত বাঁধ মেরামতের নির্দেশ দেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!