বুধবার দুপুরে নগরীতে দু’ঘন্টার বৃষ্টিতে অধিকাংশ রাস্তা ডুবে যায়। বর্ষা মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয় বুধবার দুপুর ১টা থেকে ৩টা নাগাদ। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১০৪ মিলিমিটার। ভারি বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। রাত দুটোর পর পিটিআই মোড়, রয়েল ও গগনবাবু রোডে পানি নিষ্কাশন হলেও মুজগুন্নি মহাসড়কের পানি এখনো নামেনি।
গেল বছরে খানজাহান আলী সড়ক, কেডিএ এভিনিউ, যশোর রোড ও মজিদ স্মরনী সংস্কার করে উঁচু করা হয়। আগে এসব সড়কে বৃষ্টি হলেই পানি জমতো। তবে এখন নগরীর অধিকাংশ সংযোগ সড়কগুলোতে পানি জমে থাকছে দীর্ঘ সময়। এরমধ্যে আহসান আহম্মেদ রোড, শামসুর রহমান রোড, টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোড, শেখ পাড়া গোবরচাকা, সোনাডাঙ্গা আবাসিক, মুজগুন্নি আবাসিক, নিরালা, গল্লামারি ও খালিশপুর, দৌলতপুর এলাকার সবগুলো সড়কেই পানি জমছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।
নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার মুজগুন্নী মহাসড়কটির সর্বশেষ সংস্কার হয় ২০১২ সালে। এ সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে জমে হাঁটু পানি। এর পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করে তবেই রাস্তা সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছে কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরনে ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। সেই প্রকল্পে প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে। বর্তমানে নগরীর ৪টি ওয়ার্ডে ১৩টি ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৬টি ড্রেন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তিন সপ্তাহ আগে। দুটি ড্রেন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। এসব নির্মাণ কাজে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। এছাড়া আরও ১১টি ড্রেন পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নগরীর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা আকতার হোসেন জানান, এ সড়কটির পাশের ড্রেনের কাজ শুরু হয় অন্তত ৬ মাস আগে। সেখান থেকেই এটি দিয়ে চলাচল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় লাগার কারনে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
একই দাবি করেছেন আহসান আহম্মেদ রোডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ২৬ জুনের মধ্যে ঠিকাদারের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। একপাশে ড্রেন নির্মাণ হলেও অন্যপাশের কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি। ড্রেন নির্মাণের ঠিকাদারের ধীরগতির কারণে এ সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচলে কষ্ট হয়। দুই পাশে নির্মাণ সামগ্রী ও মালামাল রাখায় মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না।
এছাড়াও নগরীর ট্যাংক রোড ও বড় বাজার ক্লে রোড দিয়ে চলাচল বন্ধ রয়েছে। নির্মাণের ধীরগেিত বৃষ্টির পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ছে রাস্তা। বৃষ্টি পানি দেরিতে নামায় সড়কের কার্পেটিংও উঠে যাচ্ছে দ্রুত। সময়মতো শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়িয়েছে নগরবাসীর।
খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী এজাজ মোর্শেদ চৌধুরী। বুধবার ও বৃহস্পতিবার তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কেসিসি’র কনজারভেন্সি কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, করোনার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ড্রেন পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলেও পানি সরতে সময় লাগবে না।
মুজগুন্নি মহাসড়কের পানি কেন ২৪ ঘন্টায় নামছে না ? জবাবে মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, তিনি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
খুলনা গেজেট/এনএম