খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় ক্ষমতাসীন আ’লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। গ্রুপটি ক্রমান্বয়ে সংগঠিত হচ্ছে। টার্গেট আগামী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ তাদের দখলে রাখা। গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম।
জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলায় ক্ষমতাসীন আ’লীগের মধ্যে গ্রুপিং থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ইতিপূর্বে নির্বাচন করার নজির নেই। ২০১৮ সালের মাসে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে চেয়ারম্যান পদে জেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আঃলীগের সভাপতি ও প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান খান নজরুল ইসলাম।
একই নির্বাচনে উপজেলা আ’লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান মল্লিক মহিউদ্দিনও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। নির্বাচনে আ’লীগের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে এবং গোপনে কাজ করলেও নির্বাচন পরবর্তী দল তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দলের বিদ্রোহী গ্রুপ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে। জেলা আ’লীগ শুধুমাত্র বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ মারুফুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে বিদ্রোহী গ্রুপ এই সুবিধাজনক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। ওই নির্বাচনে উপজেলাধীন ৬ টি ইউনিয়নের ৫ টিতে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হয়।
এর মধ্যে ৪ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে দিঘলিয়া সদর, সেনহাটী, গাজীরহাট এবং যোগীপোল ইউনিয়নে আঃলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আড়ংঘাটা ইউনিয়নেও আঃ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার কারণে ইউনিয়ন ভিত্তিক তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মী তাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে আঃলীগের মূল নেতৃত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনের বাকি দুই বছর। ইতিমধ্যে গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী শেখ মারুফুল ইসলাম আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হওয়ার টার্গেট নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত নির্বাচনের মতো এবারও দলের একটি বৃহৎ অংশ তার পক্ষে রয়েছে বলে দলের একটি সূত্র জানায়।
উপজেলাধীন ছয়টি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের সাথে তার রয়েছে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথেও তার রয়েছে উষ্ণ সম্পর্ক। এছাড়াও গত তিন বছরে উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নমুলক কাজ করে এলাকাবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সামগ্রিক দিক বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত এ নেতা আগামী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
এছাড়া আগামী উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী কোন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে আঃলীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন খান নজরুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আঃলীগের সভাপতি। ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন সৎ, উচ্চশিক্ষিত, সজ্জন ব্যক্তি। দলের ভীতর গ্রুপিং, সাংগঠনিক দুর্বলতা, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের অসহযোগিতা এবং তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কিছুটা ঘাটতি থাকার কারণে গত নির্বাচনে তার পরাজয় ঘটে বলে অনেকের ধারণা। নির্বাচনে তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দল তার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো সহানুভূতি দেখায় নাই। এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা পর্যদস্ত। দল মনোনয়ন দিলেও আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন কি হবেন তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম