দখলে আর দূষণে বাংলাদেশের নদ নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশ একদিকে পরিণত হচ্ছে শুষ্ক ভূমিখন্ডে, অন্যদিকে এসব মৃতপ্রায় নদনদীর পানি উপচে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। এর ফলে জনমানুষের জীবনে ধেয়ে আসছে নানা ধরনের সংকট।
নদ-নদীর অতিরিক্ত পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। তারা বাংলাদেশের কোন নিরাপদ স্থানে যাযাবরের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে আড়াই কোটি মানুষ নদীর স্ফীত জলরাশির কারনে বাস্তুচ্যূত হয়েছে। এছাড়াও তাদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ননীয় দুর্ভোগ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্বনদী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ্জোহরা, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, বেসরকারি সংস্থা হেড এর নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফারিদা আক্তার বিউটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাংলাদেশ ক্রমেই মরূয়ায়নের দিকে চলে যাবে। নদীমাতৃক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সেই সংস্কৃতি আর টিকে থাকতে পারবে না। এজন্য নদীকে শাসন নয়, বরং খনন করে এর দখলদারদের উচ্ছেদ করা জরুরি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ৭০০ থেকে ৪০৫ এ নেমে এসেছে। এর মধ্যে শ’তিনেক নদী সচল থাকলেও অন্যগুলি মৃতপ্রায়। ভারত ও বাংলাদেশের সাথে ৫২টি নদীর সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আলোচকরা আরও বলেন, এক্ষেত্রে নদী সচল রাখতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
আলোচকরা আরো বলেন, পলি পড়ে নদীগুলি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র নদী দখল চলছে। একইসাথে শিল্পবর্জ্য ফেলে নদীর দূষনমাত্রা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। এর কুফল হিসাবে দেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদী এরই মধ্যে মৃত হয়েছে। ২৭টির মধ্যে অন্য নদীগুলি কোনমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। অতিবৃষ্টির কারনে এসব নদী উপচে উঁচু ভূমিতে চলে আসছে। ফলে তলিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকা সহ বিস্তীর্ন এলাকা। তারা বলেন, কপোতাক্ষ তবুও কিছুটা খনন হয়েছে। বেতনা খননের অপেক্ষা রাখে। এছাড়া সোনাই, মরিচ্চাপ এসব নদী এবং সাতক্ষীরার ৩২৭টি খাল খনন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। একই সাথে এসব নদী ও খাল দখলদারদের উচ্ছেদ করাটাই জরুরী হয়ে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/এএ