খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্নয়নে বাজেটে অধিক বরাদ্দ ও প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চলের উন্নয়নে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বাজেটে অধিক বরাদ্দ, বিভিন্ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন ও নাগরিক সমস্যা সমাধানের দাবিতে শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির উদ্যেগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মহাসচিব শেখ মোহম্মদ আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের অভিযাত্রায় খুলনাঞ্চল এখন শক্তিশালী অভিযাত্রী। এ অভিযাত্রায় খুলনা আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি খুলনার সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মোংলা সমুদ্র বন্দর আধুনিকায়ন, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, মোংলায় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, ফয়লায় বিমান বন্দর, সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার আধুনিক রেলস্টেশনসহ রূপসা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ ইত্যাদি আগামীতে নতুন এক খুলনাকে উপহার দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে খুলনা পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় শহরগুলোর একটি। ঘূর্ণিঝড়, উচু জোয়ার, জলাবদ্ধতার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও কিছু নগর দুর্যোগ ভবিষ্যত খুলনার জন্য হুমকি। এ হুমকি নিরসনের উপায় বের করতে হবে। এ লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে শহর সম্প্রসারণের কাজ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, যানজট নিরসন, নদী বেষ্টিত খুলনাকে ঘিরে শহর রক্ষা বাঁধ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়াও ময়ূর নদীসহ ২২টি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খুলনাকে একটি আধুনিক তিলোত্তমা নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে একটি জনমুখী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে আগামী ৫০ বছর উপযোগী একটি বিস্তারিত ডিজিটাল মাস্টারপ্লান প্রণয়ন, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প ও নিয়ম বহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ, সকল অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি বন্ধ করে কেডিএ-কে সেবাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, আবাসিক এলাকার নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ নতুন নতুন শপিং কমপ্লেক্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন ও মসজিদ-উপাসনালয় নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর খুলনা মহানগরীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলার আংশিক এলাকা মহানগরের সাথে সম্পৃক্ত করে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন, রূপসা শিপইয়ার্ড রোড, নিরালা রোড, গল্লামারী থেকে রায়ের মহল, আড়ংঘাটা থেকে রায়ের মহল সড়কের কাজ দ্রুত শুরু ও সম্পন্ন, খুলনার ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেটের পাশে একটি আধুনিক যুগোপযোগী বহুতল শপিং মার্কেট নির্মাণ, খুলনা বাস টার্মিনাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাস্তা প্রশস্ত করা, খুলনাকে পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোনিং পদ্ধতির প্রবর্তন বাধ্যতামূলক করতে হবে। যাতে করে কৃষি জোন ও মৎস্য জোন, অর্থনৈতিক জোন ইত্যাদি নামে শিল্প স্থাপনের এলাকার শ্রেণী বিভাগ করা যায়।

এছাড়া খুলনা মহানগরীর আওতাভুক্ত এলাকায় সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং গ্রীষ্মকালীন সময়ে মধুমতি নদীর লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পাম্প ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে ক্ষয়রোধী পাইপ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং পানির উৎস হিসেবে শুধুমাত্র ‘ভূ-গর্ভ আধারকে ব্যবহার না করে ভূ-উপরিভাগের পানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নিকট নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরা হয় :

# খুলনা পাবলিক হলের স্থলে বহুমাত্রিক দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে।
# রাস্তা-ঘাট সংস্কারের পাশাপাশি নগরীর রাস্তাগুলোকে যতদূর সম্ভব প্রশস্ত করতে হবে।
# নগরীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে।
# নগরীতে বনায়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে।
# ফুটপাত হকারমুক্ত করে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
# ময়ূর নদী সংস্কার, নদীতে জোয়ার ভাটার প্রবাহ তৈরী করাসহ নগরীর ২২টি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে।
# স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মেটারনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি একটি নগর জেনারেল হাসপাতাল এখন খুলনার মানুষের প্রাণের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিতে হবে।
# নদী বেষ্টিত খুলনার চারিপার্শ্বে শহর রক্ষা বাঁধ এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে হবে।
# খুলনার পার্কগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। পুরাতন পুকুরগুলো যাতে বন্ধ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
# জীবনের ঝুঁকি আছে এ ধরনের পুরাতন বিল্ডিংগুলো ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে খুলনা বিমান বন্দরের কাজ দ্রুত সম্পন্ন, খুলনা-মোংলা-ভাঙা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত, মোংলা পোর্টের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা, খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ চালু, খুলনা-যশোর মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা, আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে মোংলা পোর্টের অদূরে কন্টেইনার স্টেশন স্থাপন, খুলনার পাটকলসহ বন্ধ সকল মিল-কলকারখানা চালু, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং পর্যটন শিল্প বিকাশে খুলনা ফরেষ্ট ঘাট হতে সুন্দরবন ভ্রমণে ট্যুরিস্ট জাহাজের ব্যবস্থা, ভৈরব, রূপসা ও পশুর নদীর নাব্যতা বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিং এর ব্যবস্থা, সরকারী উদ্যোগে খুলনায় একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন, খুলনায় মেরিন একাডেমী ও ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা, রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়াকে খুলনা শহরের সাথে সংযোগের জন্য টানেল নির্মাণ, মুন্সিগঞ্জ-সাতক্ষীরা-যশোর রেললাইন স্থাপন, ঢাকা-ভাটপাড়া-খুলনা সরাসরি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং খুলনা-যশোর-দর্শনা ডবল রেললাইন স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জমান, শফিকুর রহমান, মিজানুর রহমান লাবু, মোশারেফ হোসেন, অধ্যাপক আবুল বাসার, শাহীন জামাল পন, চৌধুরী রায়হান ফরিদ, মোল্লা মারুফ রশীদ, রবিউল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, মীর বরকত আলী, এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, মো: সফিকুর রহমান প্রমুখ।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!