ধূমপানসহ তামাক পণ্য ব্যবহারের কারণে মানুষের ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতিসহ আরও নানা ধরনের জটিল সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, তামাকের কারণে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ক্ষতি হয়। পুরুষের যৌনশক্তি হ্রাস পায়, পাকস্থলী সমস্যা ও গ্যাংগ্রিনসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়।
বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে উন্নয়ন সমন্বয় কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, করোনকালে প্রায় প্রতিদিনই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব থেকে বাঁচার একটাই উপায় কর বাড়ানো। তামাকের নিয়ন্ত্রণের জন্য উল্লেখযোগ্য উপায় প্রতিবছর ট্যাক্স আরোপ করা। এতে সরকারের দুটি লাভ হয়। সরকারের ট্যাক্স বাড়ে ও জনস্বাস্থ্যে ব্যয় কমে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের ফলে আমাদের তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। তার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকের সম্পর্ক রয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে যারা প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষ তাদের কাছে উন্নয়নের সুফল যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের প্রধানতম কর্তব্য। এ দরিদ্র মানুষরাই কিন্তু সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন। সব সময়ই তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র মানুষদের দিকে বাড়তি নীতি মনোযোগ দরকার। সেই হিসাবে দরিদ্র পরিবারগুলোর তামাক ব্যবহারের রাশ টেনে ধরাটিও আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য থেকে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের আয়ের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি ব্যয় করে ফেলছে তামাক পণ্যের পেছনে। অর্থাৎ তাদেরকে যদি এ তামাক পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত করা যায় তাতে এরা একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। ওই অর্থ তারা অন্য কাজে ব্যবহার করে নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম হবেন। বলা বাহুল্য যে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এদের পেছনে যে সরকারি টাকা ব্যয় হয় তাও বেঁচে যাবে।
আতিউর রহমান বলেন, মোট জনসংখ্যার তুলনায় তামাক পণ্য ব্যবহারকারীর অনুপাতের বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। প্রতি বছর তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেড় লাখের বেশি মানুষ এ দেশে মৃত্যুবরণ করেন। এ প্রেক্ষাপটেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে পরবর্তী দুই দশকের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু তামাকের ওপর কর যে গতিতে বাড়ানো হচ্ছে, মাথাপিছু আয় তার চেয়ে বেশি গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় তামাক পণ্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। ফলে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের দিকে যে গতিতে এগিয়ে যাওয়া দরকার সে গতি দৃশ্যমান হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন তামাকমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সে সময়ই এই মহৎ লক্ষ্য অর্জনের পথনকশা আমাদের সামনে হাজির করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন তামাক পণ্যে করের কাঠামো ঢেলে সাজানো হবে। এ ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা দাঁড় করানো হবে যাতে তামাক পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির ফলে এগুলোর ব্যবহার কমে আসার পাশাপাশি তামাক পণ্য বিক্রয় থেকে আসা রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তামাকবিরোধী অংশীজনেরা আসন্ন অর্থবছরে তামাক পণ্যে করের যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন, তাতে ১৩ লাখ ব্যক্তি তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হওয়া, ৯ লাখ কিশোর/তরুণের তামাক ব্যবহার শুরু না করা এবং প্রায় ৯ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধের পাশাপাশি বাড়তি রাজস্ব হিসেবে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা আসার সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেএ