ড্রেনের জন্য খোড়াখুড়িতে নগরীর বাগমারা এলাকার মরহুম মহিউদ্দিন সাহেবের বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ সংবাদে ওই বাড়ির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভবন ত্যাগ করতে থাকে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
ড্রেন নির্মাণের জন্য মাটি ও ইট তোলায় বাড়িটি হেলে পড়ে বলে মালিকের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত ১৫ দিন ধরে ওই ভবনের সামনের ড্রেনের কাজ করছিল রোজা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার বিকেলে নির্মাণ শ্রমিকরা ভবনের নিচ থেকে মাটি ও ইট তুলে ফেলে। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর ভবনের নিচের মাটি ও ভবনের মূল দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। এ সংবাদ পেয়ে বাড়ির লোকজন ভবন ত্যাগ করতে থাকে। স্থানীয় জনতা ভবনটি ধ্বসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁশ দিয়ে বাধা দেয়।
বাগমারা চেয়ারম্যান বাড়ির এক প্রতিবেশী সংরক্ষিত নয় নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর মাজেদা খাতুনকে খবর দিলে তিনি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের খবর দেয়। সাথে সাথে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক বাবুল চক্রবর্তী জানান, সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তাদের খবর দেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে বাড়ি ভেতর থেকে সকল সদস্যদের বের করে আনা হয়। কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন নিময় মানা হয়নি। ড্রেনের ইটের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এ বাড়িটি।
মরহুম মহিউদ্দিনের জামাতা তৌফিকুর রহমান পিন্টু বলেন, বাড়িটি পাকিস্তানী আমলের। ২৫ বছর আগে তার শশুর বাড়িটি ক্রয় করেন। তিনতলা ভবনের ওপরে টিন সেডের কয়েকটি ঘর রয়েছে। মলিকসহ ভবনে ১২ টি পরিবার এখানে বসবাস। গত ১৫ দিন ধরে শ্রমিরা এখানে মাটি খোড়ার কাজ করছে। আজ বিকেলে শ্রমিকদের মূল বেজের নীচ থেকে ইট তুলতে নিষেধ করা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। তারা বেজের ইট ও মাটি তুলে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পরে গাথুনি ফেটে যায় এবং বাড়িটি হেলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্য ও ভাড়াটিয়ারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ত্যাগ করতে থাকে। মালজিনিস ও মূল্যবান কাগজপত্র তারা বের করতে পারেনি।
রোজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: গোলাম আযম বলেন, কুয়েট, ডিডিসি ও কেসিসির উদ্যোগে সারা শহর ব্যাপি ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। ড্রেনের জন্য কোথাও সাত ফিট আবার কোথাও আট ফিট করে খোড়া হচ্ছে। বাড়িটি ড্রেনের ইটের সলিং এর ওপরে নির্মাণ করা। ইট খুড়তে গিয়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে বাড়িটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভবনের নিচ থেকে মাটি যেন পড়ে না যায় সেজন্য বালু ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সকালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
সংরক্ষিত নয় নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর মাজেদা খাতুন বলেন, সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও পুলিশকে খবর দেন। যেন আশপাশের কারও কোন ক্ষতি না হয়। এ এলাকার অনেকেই বাড়ি নির্মাণের কাঠামোগত কোন নিয়ম মানেনি। অনেক বাড়ি আছে যাদের ড্রেনের সলিং এর ওপর ভবন নির্মাণ করা।
খবর পেয়ে বাগমারা ও পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের স্থান ত্যাগ করার জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওই ভবনের সামনের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। কেউ বাইরে বের হতে বা প্রবেশ করতে পারছেনা। রাস্তা দু’পাশে জনতার উপস্থিতি বেশ লক্ষনীয় ছিল।