খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

ডুমুরিয়ায় হরি নদীর তীরে সারি সারি শান্তির নীড়

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া

খুলনার ডুমুরিয়ায় হরি নদীর তীরে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সারি সারি রঙিন ঘর। দূর থেকে তাকালে মনে হয় সবুজ বেষ্টিত নান্দনিক কোন এক জায়গা। রঙিন টিনের আধাপাকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়ে সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায় সম্বলহীন এক দল নারী-পুরুষ।

উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নে বরুনা গ্রামে হরি নদীর তীরে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণে ২৭ পরিবারে এক শতাধিক নারী-পুরুষের বসতি। তাদের ছিল না থাকার মতো কোন বাড়ি ঘর। অন্যের বাড়িতে বা রাস্তার পাশে কুঁড়ে ঘরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হতো তাদের। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে খুশির জোয়ারে উদ্বেলিত তারা। আশ্রয়ণবাসী স্বপ্ন দেখছেন হাস-মুরগী, গবাদি পশু পালন, সবজি বাগান, মাছ চাষসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী হওয়ার। ইতিমধ্যে শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করছে পাশের বিডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিনদীর তীরে বসন্তের স্নিগ্ধ রৌদ্রে ঝিলমিল করছে সারিবদ্ধ ওই রঙিন ঘরগুলো। এর দুই পাশে বাতাসে দুলছে বোরো ধানের পাতা। আর নানা রকমের শাক সবজি। আশ্রয়ণের ছেলে-মেয়েরা গেছে স্কুলে। পুরুষরা গেছেন দৈনন্দিন কাজে। আর নারীরা গৃহে ব্যস্ত সময় পার করছেন নানা কাজে।

সেই সুখনিলয়ের আঙিনায় গত ১৬ মার্চ গিয়ে দেখা যায় রূপসী বিশ্বাস নামে এক গৃহবধু(৩০) দুপুরে বেগুন-আলু দিয়ে তেলাপিয়া মাছের ঝোল রেঝেছেন। তার তিন সন্তানের একজন গেছে স্কুলে আর দুই শিশু সন্তান বাড়িতে খেলছিলো। স্বামী অসিত বিশ্বাস পরের ক্ষেতে শ্রম দিতে গেছেন।

তিনি বলেন, আগে বসবাস করার মত বাড়ি ছিল না আমাদের। দিন শেষে রাতে একটু শান্তিভাবে ঘুমাতেও পারতাম না। বৃষ্টির সময় ঘরের মধ্যে জল পড়তো। এখন প্রধানমন্ত্রী জমিসহ সুন্দর একটি পাকা ঘর দিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের কুঠির।

আরেক বাসিন্দা ইব্রাহিম দফাদারের স্ত্রী নার্গিস বেগম(২৪) বলেন, কাটেঙ্গা পূর্বপাড়া এলাকা থেকে আমরা এসেছি। সেখানে ছোট্ট ভাঙ্গা ঘরের মধ্যে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। সরকার আমাদের এখন জমিসহ রঙিন পাকা ঘর দিয়েছেন। আমরা অনেক খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন তিনি।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ধামালিয়া ইউনিয়নে বরুনা পশ্চিমপাড়া এলাকায় হরি নদীর চরভরাটি ৮৫ শতাংশ জমির উপর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২৭টি পরিবারের জন্য রঙিন পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে একযোগে ঘরগুলো হস্তান্তর করলেও পূর্ণরুপে গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে তারা বসবাস শুরু করেন। আশ্রয়ণের উত্তর সদিকে হরি নদী, তার পাশ দিয়ে সম্প্রতি ১২ ফুট প্রস্থের একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আর দক্ষিণ পাশে আশ্রয়ণবাসীদের জন্য একটি পুকুর করে দেয়া হয়েছে। সেখানে তারা মাছ চাষ করছেন। ওই পল্লীতে সুপেয় পানির জন্য ৩টি ডিব টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে মিলেমিশে একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গীও হচ্ছে তারা। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, দেশের একজন মানুষও ভুমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন। এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬৪০টি ঘর হস্তান্তরিত হয়েছে। এছাড়াও ১৬৫টি ঘরের কাজ চলমান। পর্যায়ক্রমে সকল ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আশ্রয়ণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরণের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরণের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!