যশোরের চৌগাছায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিলারদের সার বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনকে তদবিরের মাধ্যমে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। বিসিআইসি সার ডিলারদের বাঁচাতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা একজন জনপ্রতিনিধিকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে এ বদলি করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরআগে ডিলারদের অব্যাহত হুমকির প্রেক্ষিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চৌগাছা থানায় জিডি করেছিলেন এই কর্মকর্তা।
গত ৯ নভেম্বর কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনকে স্ট্যান্ড রিলিজের অফিস আদেশ দেয়া হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আসাদুল্লাহ আদেশে স্বাক্ষর করেন ১২ নভেম্বর। আদেশে বলা হয়েছে এটি স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গন্য হবে। একই আদেশে রইচ উদ্দিনের স্থলে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদকে বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ধারাবাহিক অনিয়মের অভিযোগে ও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রিসহ নানা অভিযোগে উপজেলা ফার্টিলাইজারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইউনুচ আলী দফাদারের মেসার্স ইউনুচ আলীসহ উপজেলার তিন জনের ডিলারশিপ বাতিলের সুপারিশ করে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি।
বাতিলের সুপারিশকৃত অন্য দুই ডিলার হলেন, পাতিবিলা ইউনিয়নের সার ডিলার ফরিদুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স ফরিদুল ইসলাম এবং আতিকুর রহমান লেন্টুর মালিকানাধীন মেসার্স শয়ন ট্রেডার্স। এদের মধ্যে শয়ন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে উত্তোলনকৃত সার গুদামে না এনে উপজেলার বাইরে বিক্রি করে দেয়া, অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি, মূল্য তালিকা না টানানোসহ কৃষি বিভাগের নির্দেশনা না মানার অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ আগস্ট ১৭ মেট্রিকটন ডিএপি সার উত্তোলন করার আগমনি বার্তা দিয়েও সার গুদামে না তোলায় তার বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও তিনি নিবৃত হননি। এছাড়া ইউনুচ আলী ও ফরিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন (৫০ মেট্রিকটন) গুদাম না থাকা, খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র না থাকা, উত্তোলনকৃত সার গুদামে না এনে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া, কৃষি বিভাগের নির্দেশনা না মানাসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি ইউনুচ আলী দফাদার বলেন, ৯৫-৯৬ সাল থেকে আমি উপজেলা ফার্টিলাইজারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মাসুদ সেক্রেটারি। আমাদের কৃষি অফিসার খুব সৎ লোক। যে আইন আছে প্রাকটিক্যালি তো সব কাজ করা যায় না। যেমন আমি সারের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি সিংহঝুলি, রোডের গায়ে তিনটে দোকান আছে। আমরা সেখানে সার নামিয়ে দেব, কিন্তু উনি সেটা মানবেন না। মানে উনি শতভাগ নিয়ম মানতে চান, কিন্তু মানবিক দিক তো আছে। নিজেদের গুদামে সার নামিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের ঘরে বিক্রি করলে আমাদের বাড়তি লেবার ও বহন খরচ হয়। আমরা আগেও নিয়ম মেনে চলতাম, এখনও নিয়ম মেনে চলছি।
খুলনা গেজেট/কেএম