ট্রাক ও বাসের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। ফলে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনেও।
৪ নভেম্বর থেকে প্রতি লিটার ডিজেল তেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। লসের পরিমাণ বেশী হবে ভেবে মালিকেরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে রবিবার রাত থেকে আবার চলাচল শুরু হয়।
নগরীর রয়্যাল মোড়ের টুঙ্গিপাড়া বাস কাউন্টারের টিকিট ম্যান কামরুল ইসলাম স্বপন জানান, রাত থেকে তাদের পরিবহন চলাচল করছে। তবে প্রতিটি টিকিটে আগের থেকে ভাড়া এক শ’টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে নন এসি বাসে প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ শ টাকা নেওয়া হতো এখন সেখানে ছয় শ’টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার দ্বারা জানান, ডিজেল তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের ভাড়া নিলে পরিবহন চালানো খুব দায় হয়ে পড়বে। তিনি আগের ভাড়ায় যাত্রী বহন করছেন। তবে আজ সন্ধ্যায় খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার নতুন ভাড়ার রেট আসলে তা কার্যকর করতে হবে বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।
বড় বাজারের খেলনা ব্যবসায়ী ফয়সাল জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এই প্রথম ঢাকায় যাওয়া তার। একশ’ টাকা বেশী দিয়ে টিকিট ক্রয় করেছেন। ঢাকায় গিয়েও বেশী ভাড়ায় যাতায়াত করতে হবে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও তাকে বেশী ভাড়া গুনতে হবে। যার প্রভাব ক্রেতাদের ওপর পড়বে।
কথা হয় গোলাম রসুলের সাথে। তিনি টুঙ্গিপাড়া একপ্রেসে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন। ভাড়া বৃদ্ধির কথা শুনে তিনি হতাশাব্যক্ত করে বলেন, ১৫ দিন আগে তিনি পাঁচ শ’টাকায় ঢাকায় গেছেন, আর আজ তাকে সেখানে ছয় শ’টাকা গুনতে হচ্ছে। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
লঞ্চের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল ১০ টায় নগরীর নতুন বাজার লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় এর বাস্তব চিত্র। তখন এমভি মোহাম্মাদীয় কোম্পানীর একটি লঞ্চ কয়রার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। লঞ্চের টিকিট মাস্টার এ প্রতিবেদককে জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদেরও ভাড়া বাড়াতে হয়েছে। একদিন লসে মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আজ থেকে নতুন ভাড়ায় যাত্রী বহন করতে হচ্ছে। না হলে মালিক মারা যাবে। গিলাবাড়ি পর্যন্ত প্রতি জনের ভাড়া আগে ১শ’ টাকা ছিল সেখানে এখন ১শ’২০ টাকা করে প্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
ওই লঞ্চের যাত্রী ইয়াছিন গাজী কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থী। দু’দিন আগে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যেতে পারিনি তিনি। লঞ্চে করে বাড়ি যাচ্ছেন। ভাড়া বেশী হওয়ায় তার সাথে টিকেট মাষ্টারের বাকবিতন্ডা হয়েছে। করোনার অতিমারিতে যেখানে সব কিছুর মূল্য সরকারের কমানোর কথা সেখানে উল্টাটা হচ্ছে আমাদের দেশে, বললেন তিনি।
মেসার্স বাণিজ্য ভান্ডরের মালিক আব্দুল মালেক মিয়া জানান, ফরিদপুর, চান্দেরহাট, নগরকান্দা, ঝাড়–দে ও মোকছেদপুরসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে তিনি পেঁয়াজ ক্রয় করেন। ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে বেশ। আগে যেখানে এ পন্য খুলনা পর্যন্ত আনতে তার সাত থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন ক্ষেত্র বিশেষ সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ আনতে দুই টাকা বেশী খরচ হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।
এদিকে জালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও। বর্তমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৫২ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেগুন ৭০ টাকা, শিম ১শ’ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বেড়েছে চালের দামও। অথচ ধর্মঘটের আগেও এসকল পণ্যের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা কম ছিল।