খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী আজ

ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু কথা

ডা. হিমেল ঘোষ

গতকাল ১৪ নভেম্বর উদযাপিত হলো বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ডায়াবেটিসের মহৌষধ ইনসুলিনের আবিষ্কারক “ফ্রেড্রিক বেন্টিং” এর জন্মদিন ১৪ নভেম্বরকে এই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সমগ্র দুনিয়ার প্রায় ১৬০টি দেশ একসাথে এই বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করছেন। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৪৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার মাঝে প্রায় ২০ কোটি মানুষ জানেন না যে তাঁদের শরীরে ডায়াবেটিস নামক মারাত্মক এক রোগ রয়েছে। আগামী ২০৩৫ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৬০ কোটি। যাঁদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাঁদের ৭৫% ই ৬০ বছরের আগেই মারা যান। ব্যাপারটা অনেকটা এমন হবে যে, যে ঘরে ডায়াবেটিস থাকবে না- তাঁদের বলা হবে “লাকি ফ্যামিলি”।

ডায়াবেটিস নামের আভিধানিক অর্থ “Sweet Urine” বা মিষ্টি মূত্র। মূত্রের উৎকট গন্ধের মধ্যেও যদি পিঁপড়ার আগমন হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে ঐ লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। কারণ বৃক্কে রেনাল থ্রেসোল্ড সীমা অতিক্রম করার পর গ্লুকোজ আর শরীরে থাকতে চায় না। অসমোটিক ডাইউরেসিস হয় বলে বার বার প্রস্রাব হয়, তাই একে বহুমুত্রও বলে। ডায়াবেটিস হতে পারে প্রধাণত ২ ধরনের – টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো অটোইমিউন রোগ আর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলো মেটাবলিক সিন্ড্রোম এর একটি অংশ। যেহেতু ৯৫% ডায়াবেটিস রোগ টাইপ ২ ধরণের, সুতরাং জীবনযাপনের নিয়মে পরিবর্তন এই রোগের সম্ভাবনা ৬০% কমিয়ে দিতে পারে।

আজকাল অজানা কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোগীর জন্য প্রথম যে টেস্ট করা হয় সেটা হলো – ডায়াবেটিস এর জটিলতা থেকে উৎপন্ন হাইপো অথবা হাপারগ্লাইসেমিয়ার পরীক্ষা। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ডায়াবেটিস রোগের ভয়াবহতার কিছু চিত্র –

১। পৃথিবীর সব রোগের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল রোগের নাম ডায়াবেটিস। শুধু বাংলাদেশেই এই রোগে রোগীর সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি। তার অর্থ প্রতি ১১ জনের মধ্যে ১ জনেরই ডায়াবেটিস আছে।
২। সাড়া বছরে সমস্ত দুনিয়ায় যত মানুষ এইডস ও ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা যান, শুধু ডায়াবেটিসে মৃত্যুর সংখ্যা একক ভাবে তার চেয়েও বেশী।
৩। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৬৭% রোগী স্ট্রোক অথবা হার্ট এটাকে মারা যান।
৪। ডায়াবেটিস একটি নিরব ঘাতক। তাই গোপনে গোপনে কিডনি, রেটিনা, হার্ট, ব্রেইনকে নষ্ট করে দেয় ডায়াবেটিস। এখানে মজার বিষয় হলো- পূর্ণমাত্রার ডায়াবেটিসের চেয়ে অল্প মাত্রা ডায়াবেটিস বা ইমপেয়ারড গ্লুকোজ আরো বেশী ক্ষতিকর।
৫। আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন এনার্জি ড্রিংকস খেতে কড়া ভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ এটা একবারেই রক্তের গ্লুকোজ খুব দ্রুত বাড়িয়ে ফেলে। এতে ইনসুলিন নিঃসরণের ধারাক্রম নষ্ট হয়। ডিজগ্লাইসেমিয়া হয়ে যেতে পারে এতে। এবং শেষমেষ দীর্ঘদিন এই অবস্থা থাকার পর হয়ে যায় ডায়াবেটিস।

আমাদের দেশের মানুষের ধারণা – চিনি অথবা মিস্টি বেশী খেলে ডায়াবেটিস হয়। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস জন্ম থেকেই থাকে। সেই শিশু তো জন্মেই আর মিস্টি খাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাহলে তার কিভাবে ডায়াবেটিস হলো? অনেকে হয়তো বলতে পারেন যে শিশুটির মা মনে হয় গর্ভাবস্থায় বেশী মিষ্টি খেয়েছিলো। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। আবার উলটো ধারণাও প্রচলিত আছে সবার মধ্যে। সেটা হলো- ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি অথবা চিনি খাওয়া যাবে না। সেটা আরো বড় ভুল। একটা মিষ্টি খাওয়া পড়লে একবেলা কার্বোহাইড্রেট মানে ভাত বা রুটি স্বাভাবিকের চেয়ে কমিয়ে খেয়ে নিয়ন্ত্রণ করলেই তা সমান হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে যে, ডায়াবেটিসে মিস্টি বাঁধা নয়, কিন্তু ডায়েট, ড্রাগ অথবা ডিসিপ্লিন মেনে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো আসল ব্যাপার। অর্থাৎ মিষ্টি নিষেধ না- তার মানে এই নয় যে যথেচ্ছ মিষ্টি খাওয়া যাবে। মাঝে মাঝে গ্লুকোজ কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যেতে পারে – তখন ঐ মুহূর্তে রোগীকে মিষ্টি বা চিনির পানি না দিলে রোগী কিন্তু মারা যেতে পারেন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীর যদি পূর্ব থেকেই ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তাহলে তাঁর মৃত্যু ঝুঁকিও অনেক বেশি বেড়ে যায়।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!