মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আইডিয়াল কলেজ রোডের নাদিরা খাতুন। ২০০৮ সালে এইচএসসি পাসের পরেই বিয়ে হয় বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় স্বামীর সাথে টুক-টাক ঝগড়া হতো। এমনি চলতে চলতে জন্ম হয় ফুটফুটে ছেলে সানাউলের। ছেলের বয়স যখন এক বছর তখনই হয় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরেই শুরু হয় সন্তাকে নিয়ে তার জীবন-যুদ্ধের লড়াই।
ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করেননি তিনি। ছেলে সানাউল ইসলাম ও বৃদ্ধা মা নিলুফা বেগমকে নিয়ে তিনজনের সংসার। বিবাহ বিচ্ছেদের পরেই তিনি লেখাপড়ার জন্য ডিগ্রিতে ভর্তি হন। কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ার চালিয়ে যান। শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই আবারও লেখাপড়া ছেড়ে দেন। এরপরে শিশু সন্তান সামিউল হাটতে শিখলে ফের খুলনার আমদা নাসিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। চার বছরের নার্সিং সম্পন্ন করে এক বছরের ইন্টার্নিও সমাপ্ত করেন নাদিরা।
নার্সিং সম্পন্ন হলেও চাকরি মেলেনি তার। ফলে পরিবারের হাল ধরতে জীবিকার সেই ঠোঙ্গা বানিয়ে দোকানে বিক্রি করা। যা দিয়ে চলছে এ তিনজনের জীবনযুদ্ধ।
নাদিরা বলেন, আমি এক বছর ইন্টার্নি করেছি খুলনা সদর হাসপাতাল থেকে। আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখনো যদি চাকরি পাই তাহলে ঠোঙা বানানোর কাজ ছেড়ে দিবো।
তিনি আরো বলেন, ছেলের যখন এক বছর বয়স তখন থেকেই লড়াই শুরু। এখন ছেলের বয়স দশ বছর। মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ে। আমরা মা ও ছেলে ভালো আছি।’
তিনি জানান, আত্মবিশ্বাসই আমাকে এখানে নিতে পেরেছে। বাবা নেই তবু বাবার বাড়ির আশ্রয়টা এখনো আছে। এখন আর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের ভয় তাড়া করে না।
নাদিরার মা নিলুফা বেগম বলেন, আমি পেটে ধারণ করেছি সন্তানকে, সবাই ফেলে দিতে পারে । আমি তো ফেলে দিতে পারি না। শুধু মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নাদিরাকে ওর স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে আসছি।
নাদিরার প্রতিবেশী মাইমুনা আক্তার মিতু বলেন, শুধু মাত্র তার আত্ববিশ্বাসের কারণে আজও জীবন যুদ্ধে লড়াইটা চালিয়ে আসতে পারছে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি