খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক

টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত, খুলনায় ভ্যাকসিন পৌঁছাবে ৩১ জানুয়ারি

তরিকুল ইসলাম

খুলনায় করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা সংরক্ষণ, টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণ, কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও প্রথমধাপের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। খুলনায় টিকা পৌছাবে ৩১ জানুয়ারি।

ইতিমধ্যে প্রথমধাপে প্রাপ্তদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে টিকা পেতে অবশ্যই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। টিকা সংরক্ষনের সকল প্রস্তুতি ও টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্ধারণ করা হয়েছে টিকাদান কেন্দ্রও। টিকাদান কার্যক্রম ও পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সমাধানের জন্য জেলা, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি দূর করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে কাউন্সিলিংসহ সমাবেশ করা হচ্ছে।

খুলনা সিভিল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার জন্য বরাদ্দকৃত টিকা গ্রহণ করা হবে ৩১ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদকে সভাপতি করে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ ১৩ সদস্যের টিকা রিসিভিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকা সংরক্ষণে ৩০টি আইএলআর (হিমায়িত বাক্সের মধ্যে সংরক্ষণ) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১৩টি ও নয়টি উপজেলায় ১৭টি আইএলআরে টিকা সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটিতে ৭ হাজার করে ভ্যাকসিন (টিকা) রাখা যাবে। টিকা ২ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে সার্বক্ষনিক বিদ্যুতের ব্যবস্খা নিশ্চিতে সংরক্ষনাগারে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি রাখা হয়েছে জেনারেটরের ব্যবস্থা। এছাড়া যুক্ত করা হয়েছে বিদ্যুতের দুটি ফেজও।

এদিকে, টিকা দেয়ার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমধাপে নগরীর সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, বিজিবি হাসপাতাল, তালতলা হাসপাতাল ও লাল হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হবে। আর উপজেলা পর্যায়ে স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ টিকা দেওয়া হবে। প্রতিটি টিকাদানকারী টিমে দুইজন টিকা প্রয়োগকারী ও ৪ জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবে। টিকা প্রদান কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আরও জানা যায়, নগরের টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। সফল বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে সভাপতি ও একই সংস্থার চীফ মেডিকেল অফিসারকে সদস্য সচিব করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা, সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র (পৌরসভা থাকলে), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদফতরের সহকারী প্রোগ্রামার, দু’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত), স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে এমন দুটি এনজিও’র প্রতিনিধি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত)।

খুলনা জেলায় ৯৭ হাজার ২৩০ জন সম্মূখসারির জনগোষ্ঠীর প্রথমধাপে টিকা প্রদান করা হবে। পরে প্রতি মাসে করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। প্রথম পর্যায়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও দুটি পৌরসভার ১ হাজার ৬৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন এই টিকা। এছাড়া ওই তালিকায় খুলনায় কর্মরত সরকারি কর্মচারির সংখ্যা রয়েছে ৩০ হাজার ৬০৬ জন, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ৪ হাজার ১৩০ জন, বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ৮ হাজার ১০১ জন, আইন শৃংঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা রয়েছে ৫৪৮ জন, বিজিবি সদস্য ৪১৩ জন, পুলিশ সদস্য ১ হাজার ৮৫৯ জন, আনসার ও ভিডিপির সদস্য ৮ হাজার ৯৯৩ জন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মচারীর সংখ্যার মধ্যে জেলা পরিষদ পাচ্ছে ২৯৫, উপজেলা পরিষদ পাচ্ছে ১ হাজার ৯১, ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ১ হাজার ২৭৩, শিক্ষাকর্মী মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৮৪ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ২০ হাজার ৯০০ জন এই টিকা পাবেন। তালিকায় প্রথম পর্যায়ে খুলনায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরাও এই টিকা পাচ্ছেন ৫৪৭ জন।

অপরদিকে ১৮ বছরের নিচের শিশু, গর্ভবতী মহিলা, দুগ্ধবতী মা ও মুমুর্ষু রোগীরা টিকা নিতে পারবে না। এছাড়া যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক নয় তাদের টিকা দেয়া হবে না এবং টিকা পেতে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামুলক বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে নানা রকমের ভয়ভীতি রয়েছে। এজন্য উৎসাহ দিতে উপজেলা কমিটিসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যেয়ে কাউন্সিলিং করছেন। তাছাড়া সমাবেশ করার পাশাপাশি স্থানীয় ডিস লাইনে ব্রেকিংও দেয়া হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. সাদিয়া মনোয়ারা উষা বলেন, ৩১ তারিখে প্রথম টিকার চালান আমাদের হাতে আসবে। দীর্ঘ ১০ মাস পরে ভ্যাকসিন আসছে এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। তিনি আরও বলেন, টিকা দেওয়ার পর টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, হালকা জ্বর ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে ভয়ের কোন কারণ নাই। যে কোন উপসর্গ দেখা দিলেই আমাদের জানাতে হবে।

উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!