খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় অভয়নগরের শতাধিক পরিবার

অভয়নগর প্রতিনিধি

যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদাহ বিলের সরকারি পোলের মুখে বাঁধ ও অবৈধ দখল করায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে বাগদাহ গ্রামের শতাধিক পরিবার। তীব্র বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধাতার শিকার হয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার ।

এ উপজেলায় রের্কড পরিমাণ বৃষ্ঠিপাতে তলিয়ে গেছে বসত ভিটার আঙ্গিনা ও ফসলের ক্ষেত। এমনকি ঘরের মধ্যে পানি থই থই করছে। স্কুলে যেতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাগদাহ বিল পাড়ের এই গ্রামটি নীচু আর আশপাশের এলাকা তুলনামূলক ভাবে উঁচু। এজন্য ৩০ বছর আগে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য ভবদহের টেকা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে একটি খাল খনন করা হয়।

প্রায় ২০ বছর আগে মাছ শিকারের জন্য খালটিতে একটি ইটের বাঁধসহ আরও কয়েকটি বাঁধ দেওয়া শুরু হয়। বাগদাহ বিলে সরকারি কালর্ভাড এর মুখ বন্দ করে রেখেছে এলাকার মুনছুর নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী। তিনি পানি প্রবাহে বাধাঁ প্রদান করে মাছ চাষ করে আসছেন।

এছাড়াও খালের পাশের বাসিন্দারা বাঁধের পাশে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলেই গ্রামের একটি অংশ এখন পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে আবারও পানিবন্দি রয়েছে এলাকার শতাধিক পরিবার।

হুমায়ন বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে বর্ষাকালে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কেউ এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয় না। যারা খালে বাঁধ দেন, তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এজন্য কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এমনকি তাদের নামও বলতে চান না।

মর্জিনা বেগম বলেন, ঘরে ও রান্না ঘরে পানি উঠে গেছে। রান্না করতে পারেনি। আমার ৬ জন সদস্য সবাই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। আকলিমা বেগম নামের একজন মহিলা বলেন, জলাবদ্ধতায় পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। এবার আমনের মৌসুম রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে ধানের চারা ডুবে গেছে।

মারুফ ইসলাম ও রাজু হোসেন নামে একজন বলেন, বাড়ি থেকে বের হতে হলে কোথাও হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পানি ডিঙিয়ে বাজারে বা কাজে যেতে হয়। বর্ষায় আমাদের জন্য অভিশাপের মত। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বই-খাতা ও জামা একটি ব্যাগে ভরে তা মাথায় নিয়ে মূল সড়কে উঠেছে। পরে সেখানে ভেজা কাপড় রেখে আবার জামা পরিধান করে স্কুলে যায়। বিকেলে ফেরার পথে একই ভাবে বাড়ি যায়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কয়েকজন মিলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হয়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যাটি অবগত হয়ে শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শীঘ্রই খালের বাঁধ অপসারণ করে গাছপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পরে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হবে।

এ ঘটনায় মুনছুরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) থান্দার কামরুজ্জামান বলেন, আমি গতকাল শুক্রবার সকালে বিষয়টি জেনেছি। কালর্ভাডের মুখ বন্ধ করে রাখা আছে। আমি শ্রমিক নিয়ে অপসারণ করার চেষ্ঠা করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ বলেন, টানা বর্ষণে বাগদাহ গ্রামের অনেক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে। এর আগে কেউ পোলের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আজই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!