ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের এক মাস ১৭ দিন পার হলেও জোয়ার ভাটায় ভাসছে উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দশালিয়া গ্রাম। ফলে জোয়ারের সময় ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় আর ভাটায় জেগে ওঠে। বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর অভিযোগ ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম। ঘূণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। বিধ্বস্ত হয়েছে ১২৫০ টি ঘর।
তলিয়ে গেছে দুই হাজার পাঁচ’শ চিংড়ী ঘের। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং ১৫ হেক্টর জমির কৃষি ফসল নষ্ট হয়েছে।
এলাকাবাসীর সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের মঠের কোণা ক্লোজার ও দশালিয়া থেকে হোগলা অভিমুখি ক্লোজার, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ক্লোজারসহ ১০ টি ক্লোজারের রিংবাধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়।বাকি ২ টি পয়েন্ট উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী ও মহারাজপুরের দক্ষিণ দশালিয়া স্বেচ্ছাশ্রমে বাধা সম্ভব না হওয়ায় এখনো জোয়ার ভাটায় ভাসছে।
হরিয়ারপুর রাস্তার উপর বসবাস করেছেন গাতীরঘেরী গ্রামের অলোকা রানী। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ইয়াসের দিন শাকবেড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ঘর বাড়ি হারিয়ে যায়। তার পর আশ্রয় নেন হরিহরপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের উপর। দেড়মাসের বেশি সময় হয়ে গেছে এখনো বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন জোয়ারে সব কিছু তলিয়ে যায় আর ভাটায় জাগে। কবে বাঁধ হবে জানিনা। বৃষ্টি হলে সব কিছু ভিজে যায়, সবাই মিলে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে হয়।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, যেটুকু জায়গা জমি ছিলো এর আগের আইলার তান্ডবে তা ভেঙে নদীতে চলে গেছে। কয়দিন আগে তিনকাটা জমি কিনে একটা ঘর বাঁধা শুরু করেছিলাম। সে ঘরে একটি রাতও থাকতে পারিনি। সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এবারের জলোচ্ছ্বাসে। বাঁধ হলেও ঘরে ফিরতে পারবো না। কারণ ঘর বাধার জায়গা নেই। অলোকা রানীর মত উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন গাতির ঘেরী গ্রামের প্রায় ৯০ পরিবার ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দশালিয়া গ্রামের প্রায় ১০ টি পরিবার জোয়ার ভাটায় ভাসছে।বাঁধের ঝুপড়িই এখন তাদের আশ্রয়স্থল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাশেদুল রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী ক্লোজার ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ক্লোজার দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তর অধিনে জাইকার অর্থায়নে ওখানে কাজ হচ্ছে। ওখানের কাজটা আমাদের দেখে নেওয়ার দায়িত্ব।