‘সকাল ধরে বর্ষা হতিলো। দুপুরের রান্না করতিলাম। নদীতে তখন জোয়ার লেগিছে। রান্না শেষ না হতে রাস্তা ছাপায় জল ঢুকতিলো। তাড়াতাড়ি আমরা সবাই রাস্তায় মাটি দিতিলাম। দুপুরে খাতি পারিনি আমরা সবাই রাস্তায় ছিলাম। এর মধ্যে দেখি রাস্তা ভেঙি আমাগে ঘর বাড়ি সব ভাসায় নিয়ে। আর কিছু নেই আমাগে।’ এভাবেই বলছিলেন কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী গ্রামের অলোকা রানী। সব হারিয়ে এখন তিনি বসবাস করছেন হরিহরপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের উপর।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, যেটুকু জায়গা জমি ছিলো এর আগের আইলার তান্ডবে তা ভেঙে নদীতে চলে গেছে। কয়দিন আগে তিনকাটা জমি কিনে একটা ঘর বাঁধা শুরু করেছিলেন। সে ঘরে একটি রাতও থাকতে পারেননি। সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এবারের জলোচ্ছ্বাসে। ৩ দিন না খেয়ে ছিলেন । বাঁধ হলেও তারা ঘরে ফিরতে পারবেননা কারণ ঘর বাধার জায়গা নেই। বাধেঁর ঝুপড়িই এখন তাদের আশ্রয়স্থল।
শেফালী দাসও হরিহরপুর গ্রামের বেড়িবাঁধে বসবাস করছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাতির ঘেরী বেড়িবাঁধ ভেঙে মুহুর্তে তার ঘরে পানি চলে আসে। তার কোলের ছোট্ট শিশুকে দুপুরে খেতেও দিতে পারেনি সেদিন। তারাহুড়া করে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। চোখের সামনে তার ঘরটা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। ২ দিন না খেয়ে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে খোলা রাস্তার উপর বসবাস করেছেন। এর পর পাশের গ্রাম থেকে তার এক আত্মীয় খাবার দিলে তার ছোট্ট শিশুকে খেতে দেন। এখন রাস্তার উপর ঝুঁপড়িতে থাকছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শুকনো খাবার দিয়েছে। সেই খাবার খেয়ে চলছে তার দিন।
ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে আরেক সর্বশান্ত তপন মন্ডল। তার সংসার চলতো দিনমজুরি ও সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরে। ইয়াসের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ঘরটি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। সব কিছু হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার কাকড়া ধরা নৌকায়। ৫ দিন নৌকায় থাকারপর বেড়িবাঁধে একটি ঝুপড়ি বেধেঁ এখন খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। সুন্দরবনে পাশ পার্মিট বন্ধ, দিনমজুরের কাজ ও হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে যে সহযোগিতা পেয়েছে তাই খেয়ে কোন রকমে দিন পার হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ হলেও ঘর বাধার জায়গা নেই তার।
অলোকা রানী শিফালী রানীর ও তপন মন্ডলের মতো ঘর বাড়ি সর্বস্ব হারিয়ে উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী বেড়িবাঁধ ও হরিহরপুর গ্রামের উঁচু বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে ৬০/৭০ পরিবার।
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের প্রায় ১২ টি পয়েন্ট ভেঙে প্লাবিত হয় অর্ধশতাধিক গ্রাম। এলাকা বাসির অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মহারাজপুর, মহেশ্বারীপুর, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতির ঘেরী জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে যারা ঘর বাড়ি হারিয়ে উঁচু বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই