দুই কন্যা আর দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে নদীর ভিতর নৌকায় করে ভিক্ষা করেন ৪০ বছর বয়স্ক ফাতেমা খাতুন। সন্তানদের দেখিয়ে এভাবে ভিক্ষা করে প্রতিদিন আয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। অবার অনেক সময় ২/৩ শ’ ইউএস ডলার বা বিদেশী মুদ্রাও পান। এই ফাতিমা খাতুনের ভিক্ষা আদায়ের লক্ষ্য শুধুমাত্র বিশ্ব্ ঐতিহ্য সুন্দরবন দেখতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটক ।
মোংলা বন্দর পার হয়ে সুন্দরবনের করমজল ফরেষ্ট অফিস। খুলনা হতে বিলাসবহুল নৌযান যোগে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে যাওয়া দেশী বিদেশী পর্যটকদের নৌযান পশুর নদীর মাঝে নোঙ্গর করার সময় দূর হতেই নৌকায় ভিক্ষার জন্য হাত পেতে চিৎকার করতে থাকে। নৌযান হতে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় উঠার সময় ফাতেমা আর তার সন্তানদের আকুতি দেখে দেশী বিদেশী পর্যটকরা সাহায্য করেন। সম্প্রতি এ প্রতিনিধি সুন্দরবন ভ্রমণকালে এই চিত্র ধরা পড়ে।
জানতে চাইলে, নিজের স্বামী আবুল হোসেন মারা গেছেন বলে জানান। তাই বর্তমানে এভাবে নৌকায় নদীতে ভিক্ষা করে সংসার চালায় বলে জানান। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয় কিনা ? প্রশ্নের জবাবে জানান, এখন স্কুল বন্ধ। নিজে মোংলা শেলাবুনিয়া ইউনিয়নের কানাই নগরের বাসিন্দা বলে জানান। চেয়ারম্যান-মেম্বর তাকে কোন সাহায্য দেয়নি বলেও জানান, নেই কোন কার্ডও।
ফাতেমা জানান, তার স্বামী মারা গেছে কয়েক বছর আগে। তাই পরিবার নিয়ে এভাবে নৌকায় করে পর্যটকদের কাছে ভিক্ষে করেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নদীতে ভাসমান থাকেন, নৌকার ভিতর রান্না বান্না করে খাওয়া দাওয়া করেন। প্রশ্ন শুনে ফাতেমা একটু বিরক্ত হন, তার কন্যা সাজু বেগম পাল্টা প্রশ্ন করেন। কি হবে এসব শুনে ? পরে তাকে আশ্বস্ত করা হয়, খবর প্রকাশ হলে তার বাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু ফাতেমার সরকারী সাহায্যের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। কত আয় হয় তাও বলতে চান না। বিলাসবহুল জাহাজের সাথে থাকা ট্রলার মাঝি করিম জানান, আগের জাহাজে এক বিদেশী এক শ’ ডলারসহ দেড় হাজার টাকা পেয়েছে। এ প্রতিনিধি যে জাহাজে ছিল সে জাহাজে ঢাকা হতে আগত কয়েকজন যাত্রীকেও এক শ’ টাকার কয়েকটি নোট দিতে দেখা যায়।
করমজলে দেশী-বিদেশী পর্যটক বোঝাই বিলাসবহুল নৌ-যান নোঙ্গর করা সময় হতে তাদের নৌকায় চিৎকার আর অঙ্গভঙ্গি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক পর্যটক মনে করে মহিলা কোন বিপদে পড়েছে। শিশু পুত্র আর কন্যাদের নিয়ে কেন এই ভিক্ষাবৃত্তি ? এমন প্রশ্ন করলে ফাতিমা একটু রাগান্বিত হয়ে জবাব দেন, মেয়েদের কোথায় রেখে আসবো? নৌকা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন ? এমন প্রশ্ন কয়েকবার করলেও জবাব দেয়নি। শুধু বলেন স্বামী মারা গেছে, তাই তিনি এই জাহাজে জাহাজে সাহায্য নিয়ে সংসার চালান।
যখন বিলাসবহুল নৌ-যান না থাকে তখন করমজলে ট্রলার নিয়ে আসা পর্যটকদের কাছে নৌকায় গিয়ে ভিক্ষা করেন। ফাতেমার কন্যা সাজু বেগম স্বীকার করেন ট্রলারে বেশী টাকা পাওয়া যায় না, তবে জাহাজ/বিলাসবহুল নৌ-যানে অনেক বেশী হয়। কয়েক দফায় একজন একাই দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছে।
সুন্দরবন ট্যুর আপারেটর মালিক সমিতির অন্যতম নেতা মাজাহারুল ইসলাম কচি জানান, নৌকায় দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে ভিক্ষে করে সে লাভবান হয়েছে, তাই অন্য কিছু করতে চায় না। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই নিয়মিত তাকে নদীতে দেখা যায়। তিনি বলেন, বিদেশীদের কাছে বিষয়টি দেশের সুনাম নষ্ট করছে। কিন্তু দেখবে কে ? বলেন এ সরকারই ভূমিহীন গরীব মানুষদের বাসস্থানসহ ভিক্ষা নিবৃত করতে নানাবিধ প্রকল্প নিয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিলাসবহুল নৌযানে যারা ভ্রমণ করেন তারা মূলত শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোর জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। আর প্রকৃতির সাথে থাকলে মনটা একটু ভালো থাকে। তাই এধরণের অভিনব ভিক্ষায় একটু বেশী করে সাহায্য দিয়ে থাকেন।
খুলনা গেজেট/এনএম