খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারের অভিযোগ

চৌগাছা প্রতিনিধি

২১ কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার টাকায় নির্মিতব্য যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ কাজে চরম অব্যবস্থাপনা এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কাজে অতি নিম্নমানের ইট, নিম্নমানের কুষ্টিয়ার বালু, স্বল্প গ্রেডের রড, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার এবং ইটের গাথুনি ও ঢালাইয়ের পর পানি দিয়ে না ভেজানো, ঢালাইয়ের পরও ঢালাইয়ের মধ্যের রড, কোন কোন ক্ষেত্রে কাঠ বের হয়ে থাকাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের যোগসাজসে এই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয়ভাবে উপজেলা প্রশাসন বা উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে সমন্বয় না করার অভিযোগও রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

প্রসূতি সেবায় জাতীয় পর্যায়ে বারবার উপজেলা পর্যায়ের দেশ সেরা হাসপাতাল হওয়ায় ২০১৮ সালে হাসপাতলটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর নানা জটিলতা শেষে প্রথমে ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল এবং পরে একই বছরের ২৯ আগস্ট কাজটির কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঠিকাচুক্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২১ কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০৪ টাকা। ১৮ মাসের মধ্যে কাজটি নির্মাণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এরপর এমসিএল-এসএইই কনসোর্টিয়াম নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নির্মাণ শুরু করে। কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত চৌগাছা উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃংখলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন সিংহঝুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিক। সভায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা শেষে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজকে আহবায়ক করে সিংহঝুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিক এবং ধুলিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পান। কমিটির সদস্যরা গত রোববার (৩১ জুলাই) অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন বলে উপস্থাপন করেন।

পরে রোববার বিকেলেই ঘটনাস্থলে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলীরা ঢালাইয়ের দিন ছাড়া ঘটনাস্থলেই আসেন না। তাদের নিশ্চুপ থাকার সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছে। রোববার বিকেলে ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর যশোরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ইমরান এবিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

স্থানীয়রা বলেন, ঠিকাদার নিজে বা তার প্রতিনিধি খুব কম সময় কাজের সাইডে আসেন ও নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করেন। ফলে শ্রমিকরা সেই সামগ্রী দিয়েই কাজ করেন। এবিষয়ে অভিযোগ করারও কোন জায়গা পাওয়া যায়না।

স্থানীয় বেসরকারি নোভা ক্লিনিকের অন্যতম সত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান বলেন, এখানে শুধুমাত্র ছাদ বা কোন ঢালাইয়ের দিন ছাড়া কোন গাথুনিতে পানি পর্যন্ত দেয়া হয়না। খুবই নিম্নমানের ইট, বালু, পাথর ও রড ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভাঙাচোরা ইট দিয়ে গাথুনি করা হচ্ছে। ঠিকাদার বা স্বাস্থ প্রকৌশল দপ্তরের লোকজন কাজের স্থানে না আসায় আমরা তাদের বলতেও পারিনা।

ঘটনাস্থলে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ বলেন, আগে যে খারাপ ইট এনেছিলো সেগুলো গাথা হয়ে গেছে। ওগুলো তো কিছু করার নেই। নতুন করে তাঁদের ভাল ইট আনার জন্য বলা হয়েছে। এখন অভিযোগ ওঠার পরে কেন এমন বলছেন, আগে কেন দেখেননি বা গাথুনি হওয়ার পর কেন সেগুলো ভেঙে ভালো ইট দিয়ে কাজ করা হবেনা প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তোর দেননি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ইমরান প্রথমে বলেন আমরা ভাল ইট দিয়েই গাথুনি করছি। পরে খারাপ ইট দেখিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারণে আমরা দেড় নম্বর ইট দিয়ে গাথুনি করছি। তিনি আরও বলেন, পানি দিয়ে কিউরিং এবং হানিকমে বোর (ছিদ্র মেরামত) না মারার বিষয়টি লজ্জাজনক। এ বিষয়ে তিনি সাইটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে এ প্রতিবেদকের সামনে বকাঝকা করেন।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার বলেন, আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার ভালো মালামাল দিয়ে কাজ করার জন্য তাগাদা দিলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিংহঝুলী ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার সত্যতা পেয়েছেন। ওই ঠিকাদারকে ভালো মালামাল দিয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা আনইশৃঙ্খলা কমিটির সভার রেজুলেশন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, অবশ্যই ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। কোন অনিয়মই প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!