চুল কাটাতে নরসুন্দরের কাছে যেতেই হয়। মোটামুটি সব নরসুন্দরেরই চুল কাটার কায়দা-কৌশল একই রকম। তবে পাকিস্তানে এক নরসুন্দরের চুল কাটার কৌশল আর উপকরণ রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেবে। তাই বলে তাঁর গ্রাহকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। বরং তাঁর ভীতিকর কৌশল গ্রাহক টানছে বেশি। ওই নরসুন্দর আগুন, চাপাতি আর ভাঙা কাচ দিয়ে চুল কাটেন।
পাকিস্তানের ওই নরসুন্দরের নাম আলী আব্বাস। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের বাসিন্দা তিনি।
আব্বাস জানান, গ্রাহকের চুল কাটার সময় তিনি তাঁর তিন অস্ত্রই ব্যবহার করেন। সব চুল সমান করতে তিনি আগুনের ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে আব্বাস ব্যবহার করেন ব্লোটর্চ। এরপর চুলে স্তর তৈরি করতে তিনি মাংস কাটার চাপাতি ব্যবহার করেন। কারও চুল আরও পাতলা করার প্রয়োজন পড়লে আব্বাস ভাঙা কাচ হাতে তুলে নেন।
প্রচলিত কৌশল ব্যবহার না করে কেন এই ভীতিকর কৌশল বেছে নিয়েছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আব্বাস। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। কাজেই গ্রাহক টানতে ভিন্ন কৌশলের বিকল্প নেই। আব্বাস বলেন, ‘আমার মনে হলো, আরও বেশি গ্রাহক টানতে আমাকে ভিন্ন কিছু করতে হবে।’
ব্লোটর্চ, চাপাতি আর ভাঙা কাচের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও কেন এই কৌশল, তার ব্যাখ্যায় আব্বাস বলেন, ‘আমি প্রথমে কৃত্রিম চুলের ওপর এই সরঞ্জামগুলো দিয়ে অনুশীলন করেছি। পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে ওঠার পরই আমি গ্রাহকের চুল কাটার সময় এসব সরঞ্জাম ব্যবহার শুরু করেছি। প্রথম যে গ্রাহকের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করেছি, তিনি পছন্দই করেছিলেন।’
২০১৬ সাল থেকেই আব্বাস ভিন্ন এই কৌশলে চুল কাটছেন। প্রথম দিকে গ্রাহকদের মনে ভয় কাজ করত। তবে এখন আর তাঁর গ্রাহকেরা এসব সরঞ্জাম ব্যবহারে ভয় পান না। বরং ব্লোটর্চ, চাপাতি আর ভাঙা কাচের ব্যবহার আলোচিত হয়েছে। গ্রাহকও বেড়েছে অনেক। এ ক্ষেত্রে অবশ্য টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে আব্বাসের হাজির হওয়াও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
আব্বাস বলেন, ‘আমার গ্রাহকেরা অভিনব এই কৌশল ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। তবে শুরুতে তাঁরা ভয় পেতেন।’
তবে আব্বাসের কাছে ব্লোটর্চ, চাপাতি আর ভাঙা কাচ দিয়ে চুল কাটাতে চাইলে বেশ ভালো পরিমাণে অর্থকড়ি খরচ করতে হবে। আব্বাসের কাছে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে চুল কাটাতে চাইলে গ্রাহককে গুনতে হয় ২ হাজার রুপি (১৩ মার্কিন ডলার)। তাই বলে ক্ষুর-কাঁচির ব্যবহার ছেড়ে দেননি আব্বাস। প্রচলিত এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে চুল কাটার জন্য আব্বাস গ্রাহকের কাছ থেকে নেন ১ হাজার রুপি। কেবল পুরুষেরাই নন, আব্বাসের কাছে চুল কাটতে ছোটেন নারীরাও। নারীদের চুল কাটতে পুরুষদের তুলনায় ৫০০ রুপি বেশি করে নেন এই নরসুন্দর।
আব্বাসের একজন গ্রাহক আলী সাকলাইন। তিনি বলেন, ‘আব্বাস চুল পরিচর্যার শুরুতে যখন মাথায় ব্লোটর্চ ব্যবহার করেন, তখন থেকেই যেন আমার ভেতর স্বস্তি আর প্রশান্তি ভর করে।’
আরুক ভাট্টি নামের এক নারী বলেন, ‘আমি আব্বাসের কাছে তিনবার চুল কেটেছি। কাঁচির চেয়ে চাপাতির ব্যবহারই আমার ভালো লাগে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই