ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন গত ১২ বছর ধরে। গত এপ্রিলের শুরুতে করোনা হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলে খুমেকের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ ও হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ মুন্সি রেজা সেকেন্দার এর অনুরোধে দায়িত্ব নেন সমন্বয়কারী হিসাবে। এর পর থেকেই সম্মুখ সারীর একজন করোনা যোদ্ধা হিসাবে করোনা হাসপাতালের রোষ্ট্রার তৈরি থেকে শুরু করে রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষ করে আইসিইউতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা চলে তার সরাসরি নির্দেশনায়। চাকুরী জীবনের এই শেষ সময়টুকু কাজে লাগাতে চান একান্তভাবে মানুষের কল্যাণে যে কারণে গত ৬ মাসে কোন প্রাইভেট প্রাকটিসও করেননি তিনি। এতে আর্থিকভাবে অনাটনে পড়লেও মেনে নিয়েছেন হাসি মুখে।
করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেকেই ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কে সরাসরি না চিনলেও নাম জানেন ভালো করে। বিশেষ করে চিকিৎসা পাওয়ায় বিড়ম্বনা তৈরী হলে তারা ফরিদ স্যারের কাছে বলে দেবো বলে হুমকি দেন কর্তব্যরত ওয়ার্ডবয় ও আয়াসহ কর্মচারীদের। এ থেকেই বোঝা যায় রোগী ও স্বজনদের কাছে ভরসার যায়গায় পৌঁছে গেছেন করোনা হাসপাতালের সমন্বয়কারী ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক ডাঃ ফরিদ আহমেদ করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার কারণে ঠিক মত সময়ও দিতে পারেন না পরিবারকে। নিজে নন মেডিকেল হয়েও চিকিৎসক স্বামীর এমন ব্যস্ততা মেনে নিতে কষ্ট হলেও হাসি মুখে দেশের মানুষের জন্য তা মেনে নিয়েছেন ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী। করোনা হাসপাতাল শুরুর প্রথম দিকেই হাসপাতালে আইসিইউ সেবা দেয়ার চেষ্টায় সচেষ্ট ছিলেন তিনি। রোগীদের জীবন রক্ষার্থে তেমন কোন প্রোটকল ছাড়াই উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়ে খুমেক এর নতুন আইসিইউ সরঞ্জাম ও ১০টি বেড নিয়ে ইনস্টল করেন করোনা হাসপাতালে। সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেগুলোতে সেটাপ করেন। সরকারি ভাবে অক্সিজেন এর হাইফ্লো মাস্ক সরবরাহে ঘাটতি থাকলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ করে তা নিয়ে রোগীদের জন্য বিনামুল্যে দিয়ে দেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সীমিত জনবল দিয়ে সেখানে সেবা স্বাভাবিক রেখে ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিজেই করোনা হাসপাতালের ডিউটি রোষ্ট্রার তৈরী করেন। আইসিইউ ও সাধারণ রোগীদের জন্য অভিজ্ঞ সেবিকাদের দায়িত্ব প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে।
ডাঃ ফরিদ আহমেদ বলেন মাত্র ৬ মাস চাকুরী আছে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে দিন রাত কাজ করেছি। একটি প্রাইভেট প্রাকটিসও করিনি। যে কারণে আর্থিকভাবে কিছুটা সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে। রাতে দেরিতে বাড়িতে যাওয়ার পরও সেখানেও সারাক্ষণ রোগীদের জন্য মোবাইলে কথা বলতে হয়েছে। এতে পরিবারও অনেক সময় কষ্ট পেয়েছে। এতকিছুর পরও এতটুকু কষ্ট পাইনি যখন দেখি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর একজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়েছে। চিকিৎসক হিসাবে এর থেকে ভালো লাগার আর কিছু হতে পারে না।
করোনা চিকিৎসা নিয়ে তিনি বলেন করোনা সহজে যাবে না । তাই ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নব নির্মিত আইসিইউ ভবন যা বর্তমানে করোনা ইউনিট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটাকে করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করার জন্য চেষ্টা করছি। এ জন্য হাসপাতালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসিয়ে তার মাধ্যমে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলার মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে যা রোগীদের সুস্থ হতে সহায়তা করছে। সামনের দিন গুলোতে তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন আপনি জানেন না। আপনি যদি সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি না মেনে করোনা আক্রান্ত হন। আপনার সাথে আপানার পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। হাসপাতালে আসলেই আপনি সুস্থ হবেন এমন কোন গ্যারান্টি নাই। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সকলের একান্ত জরুরী।
খুলনা গেজেট/এআইএন