সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানার আশংকা না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। প্রয়োজনীয় সংষ্কার সহ নজরদারি চলছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের উপর।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে জেলার ৮৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৭১৮ স্কুল-কলেজকে বিকল্প আশর কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষের ধারণা ক্ষমতা রয়েছে।
এছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও পাঁচ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। সেই সাথে সাতক্ষীরা উপকূলের আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারসহ পর্যাপ্ত জিও বালুর বস্তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ নির্দেশনা অনুযায়ি উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো জরুরী সভা করেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রক্যেশলী (এসডিই) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, উপজেলায় বেড়িবাঁধের অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউপির দূর্গাবাটি, গাবুরার দৃষ্টিনন্দন এলাকার বেড়িবাঁধ কিছুটা দুর্বল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেড়িবাঁধের এসব দুর্বল স্থানে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিপিপি শ্যামনগর উপজেলার দায়িত্বরত অফিসার সহকারী পরিচালক মুনশী নূর মোহাম্মদ বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য সাইক্লোন মোখা সচেতনতায় ২৯৮০জন সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক সাংকেতিক যন্ত্রপাতিসহ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করতেও প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে রয়েছে ১৪৯০ জন নারী।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, যেকোন দূর্যোগে উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নদ-নদী সংলগ্ন ইউনিয়নের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য নৌকা, যন্ত্র চালিত ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সকল ইউনিয়নে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং যথা সময়ে খুলে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকও।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, জেলায় ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে অতিঝুকিপূর্ণ বাঁধ রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটার। এছাড়া নিচু বেড়িবাঁধ রয়েছে ২০ কিলোমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বিষয়ে সজাগ রয়েছে। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট এলকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আরো দুইদিন আগে থেকেই উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে। দুর্বল বেড়িবাঁধের উপর আমরা সার্বক্ষনিক নজরদারি করছি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঝড়ের পূর্বেই সংকেত অনুযায়ি মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার ১৮০ জন এবং আশাশুনি উপজেলায় ১ হাজার ২০ জন সিপিপি সদস্য এবং রেডক্রিসেন্ট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পূর্বে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবর্তী নারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর এবং শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেই সাথে শ্যামনগর উপজেলার পাকুরা ইউনিয়নে উদ্ধারকারী নৌযান হিসেবে স্পিডবোট, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার এবং স্থলযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া সকল উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স টিমের সদস্যদের ঝড়ের পরে রাস্তায় গাছ পড়লে তা দ্রæত অপসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কর্মী বাহিনী প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া কলারোয়া, তালা ও সদর উপজেলা হতে যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় জনবল শ্যামনগর উপজেলায় সাময়িকভাবে মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম