খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন

গ্রীষ্মের শুরুতেই উপকূলীয় এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

গ্রীষ্মের শুরুতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রাকৃতিক দূর্যোগে বার বার বেড়িবাঁধ ভেঙে নদ-নদীর লোনা পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে খাবার পানির উৎস গুলো। লোনা পানিতে পুকুরের পানি নষ্ট ও ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় উপকূলে ব্যহত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ। খাবার পানির সন্ধানে তাই নারী-পুরুষদের কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে দুর-দুরান্তে।

বেঁচে থাকার তাগিদে তাই অনেকে দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী উপকূল অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে সরকারিভাবে তৈরি করা হোক বড় ধরনের জলাধার বা পানির প্লান্ট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদ-নদীর লোনা পানি লোকালয় ঢুকে নষ্ট হয়ে যায় খাবার পানির উৎস। এরপর আম্ফান, ইয়াস সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্য়োগে বার বার ভেঙেছে উপকূলের বেড়িবাঁধ। ফলে লেনা পানির তান্ডবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিলো। বিকল্প বেঁচে থাকার তাগিদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুরের পানি ফিল্টারিং (পিএসএফ) করে ব্যবহার করতেন স্থানীয়রা। তবে কিছুদনি পর অধিকাংশ পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েন উপকূলবাসী।

প্রতিদিন দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয় এ অঞ্চলের নারীদের। এক কলস পানি আনতে যেয়ে এক বেলা কেটে যায় তাদের। এক কলস পানির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা উপকূলীয় শ্যামনগবাসীর নিত্যদিনের ঘটনা। মাঝে মাঝে বেসরকারি একটি সংস্থার সরবরাহ করা জারের পানির উপরে ভরসা করে থাকতে হয় অনেক উপকূলবাসীর।

ভেটখালি গ্রামের জোহরা বেগম বলেন, আমাদের পরিবারে চাহিদা মেটাতে ৭-৮ মাইল পায়ে হেটে পানি আনতে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়। খুব কষ্ট হয়ে যায় পানি আনতে গিয়ে। অনেক সময় জন (শ্রম) কামাই করে সারদিন এক কলস পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

সুন্দরবন গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, মাটির পাত্রে, পানির বোতলে বৃষ্টি পানি সংগ্রহ করে ২-৩ মাস ধরে খেয়ে থাকি। তবে এখন বৃষ্টি না হওয়ায় দূর থেকে পানি আনতে হয়।

গাবুরা ইউনিয়নের ছাত্তার গাজী বলেন, চারিদিকে চোখ যায় পানি আর পানি। তবে খাওয়ার পানি না। ড্রামে করে নদীর ওপার থেকে নৌকা ভাড়া করে খাবার পানি আনতে হয়।

শুধু পানি সংগ্রহে প্রচুর শ্রমঘন্টা ব্যয় হচ্ছে উপকূলের নারী-পুরুষদের। এছাড়া নোংরা পানিতে গোসল করায় স্বাস্থ্য সংকটে পড়ছেন অনেকেই। ভুক্তভোগীদের দাবী সুপেয় পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পানির ট্যাংকি প্রদান করা হয়েছে। যেসব এলাকার গভীর নলকূপ থেকে লোনা পানি উঠে সেসব এলাকায় পুকুর কেটে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। গভীর ও অগভীর নলকুপ স্থাপন করছি। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট স্থাপন করছি। আয়রন ও আর্সেনিক দূরিকরণেও আমরা কাজ করছি। আশা করি অচিরেই খাবার পানি সংকট দূর হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, জেলার ৬৩ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে, সরকারিভাবে এ তথ্য দেওয়া হলেও সুপেয় পানি পান করতে পারছেন না ৫০ ভাগের বেশি মানুষ। সংস্কারের অভাবে উপকূলীয় এলাকায় সরকারিভাবে বসানো ৬৫০টি পিএসএফের অধিকাংশ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। জেলা পরিষদের ৭৩টি পুকুর পুনঃখনন করে কাটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে। এছাড়া ১৫ হাজার গভীর নলকূপ,৮ হাজার রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টারসহ ৪২ হাজার পানির উৎস চলমান রয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এনজিও-র’ মাধ্যমে প্রতিটি পারিবারে মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!