গ্রীষ্মকালিন তরমুজ আবাদ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কেশবপুর উপজেলার ঝিকরা গ্রামের শিক্ষিত যুবক ইমরান হোসেন। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনায় পরীক্ষামূলকভাবে ২৬ শতক জমিতে ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ আবাদ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। তার ক্ষেতের তরমুজের ফলন দেখে ওই এলাকার অনেক যুবক এ আবাদে ঝুঁকেছেন। ফলে এ উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তারা তার ক্ষেত পরিদর্শনে অভিভূত হয়েছেন।
উপজেলার ঝিকরা গ্রামের সামাদ মোড়লের ছেলে ইমরান হোসেন বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তার কলেজ ৭ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। সে বাড়িতে অলস সময় ব্যয় না করে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় সে ইউটিউবে গ্রীশ্মকালিন তরমুজের আবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। তার আগ্রহ দেখে উপজেলা কৃষি বিভাগ এগিয়ে আসে।
কৃষি বিভাগ বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তার ২৬ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতক জমিতে প্লট প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ আবাদের পরিকল্পনা নেয়। এ সময় ইমরান হোসেনও তার অবশিষ্ট ১১ শতক জমিতে তরমুজ আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষেত পরিচর্যা শুরু করেন। গ্রীষ্মের শুরুতেই ক্ষেতে তরমুজের বীজ বপণ করা হয়। তিনি ফসলের নিয়মিত পরিচর্যা করায় ৩ মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু হয়। বর্তমান তিনি তরমুজের বাম্পার ফলন আশা করছেন।
সফল চাষী ইমরান হোসেন জানান, তার ক্ষেতে তরমুজের ফল আসা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। বর্ষা মৌসুমে মাটির ওপর তরমুজ রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। এ আশঙ্কায় তিনি সমস্ত ক্ষেতে টং আকারে নেটের জাল বিছিয়ে দিয়েছেন। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় ক্ষেতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। তার ক্ষেত থেকে ১ হাজার পিচ তরমুজ উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। অসময়ে তরমুজ উঠছে বলে এর বাজার দরও বেশী। বর্তমান বাজারে প্রতিমন তরমুজ ১৫’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সমস্ত খরচ বাদে তার লাভ হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এলাকায় সাড়া জাগায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসছেন তার আধুনিক প্রযুক্তির তরমুজ ক্ষেত দেখতে।
এদিকে অসময়ে তরমুজ আবাদের কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান, কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুনির হোসেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পুলক কুমার শিকদার, শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুন্ডু, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম তার ক্ষেত পরিদর্শন করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ আবাদ উপজেলা বাপী ছড়িয়ে দিতে কৃষি কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন।
ক্ষেত পরিদর্শনকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, ‘তার প্লট প্রদর্শনীতে বীজ, সার সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়েছে। এ দেশের আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালিন তরমুজ খুবই উপযোগী। তার উৎপাদিত ফল খেতেও সুস্বাদু। লাভ বেশী হওয়ার কারণে সব সময় নতুন জাতের ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। দিন দিন কৃষকরা এসব ফসল আবাদে ঝুঁকছে।’
খুলনা গেজেট/এনএম