খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

তীব্র তাপদাহ : খেটে খাওয়া মানুষের দুর্বিষহ জীবন

একরামুল হোসেন লিপু

তীব্র তাপদাহে সারা দেশে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। খুলনাসহ এর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহে তাপদাহের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রচন্ড তাপদাহে কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) খুলনাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানা যায়, তীব্র তাপদাহ আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।

এদিকে তীব্র তাপদাহের প্রখর রৌদ্রে খেটে খাওয়া মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না এ জাতীয় খেটে খাওয়া মানুষগুলো পেটের দায়ে তাপদাহের প্রখর রৌদ্রের ভেতরও পেটের জ্বালা মেটাতে বাধ্য হয়ে কাজ করছে। অতিবাহিত করছে দুর্বিষহ এক জীবন।

তীব্র তাপদাহে প্রখর রৌদে নগরীর মুজগুন্নী এলাকার একটি সড়কে কাজ করা দিনমজুর নজরুল ইসলাম হাওলাদার (৫৫) বলেন, অভাব ছাড়া তীব্র গরমের এই রৌদ্রে কেউ কাজ করে? অভাবের তাড়নায় কাজ করতে এসেছি। বউ পোলাপান, পোলার বউ নিয়ে সংসারে খাওনের লোক ৯ জন। সবাই মিলে রায়েরমহল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। কোনরকম ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। কাজ না করলে ডাল ভাতও খাওন জুঁটবে না। এত গরমের ভীতর কড়া রোদে তাই কাজ করছি ভাই।

একই সঙ্গে কাজ করা ৫৫ বছর বয়সী আরেক দিনমজুর আব্দুল কাদের বলেন, বাস্তহারা বস্তিতে ১২’শ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি। স্ত্রী, দুই মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। সংসারের রোজগার আমাকে একা করতে হয়। গরম সহ্য করতে পারছিনা। এত গরমে কাজ করতে মন চায় না। কিছুক্ষণ কাজ করার পর হাঁপায় উঠি। তারপরও কাজ করতে হয়। কাজ না করলে যে পেটে খাওন জুঁটবে না।

সড়কে কাজ করা মহিলা দিনমজুর বিলকিস বেগম (৫৫) বলেন, পেটের দায়ে এত গরম সহ্য করে রোডে কাজ করতিছি। এত গরমে কাজ করতে মন চায় না। সংসারে ৬ জন আছি। রেলীগেট কুলিবাগানে রেলের জমিতে ভাড়া থাকি। ছেলেরা আছে। তারা কাজ করে না। সংসারে অভাব। কাজ না করলে খাবো কি? তাই বাধ্য হয়ে এই গরমে কাজ করছি।

ফুলবাড়িগেট কুয়েট সড়কের রিক্সাচালক আব্দুল কাদের। বয়স ৬৫ বছর। ২০ বছর ধরে তিনি এ সড়কে রিক্সা চালান। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বুড়ো মানুষ, দুর্বল হয়ে গেছি। তারপরও পেটের দায়ে এই গরমে রিকশা চালাতে হচ্ছে। এত গরম জীবনে আগে কখনও অনুভব করিনি। আগের মতো শরীর নেই, শরীরে কুলায় না, বেশিক্ষণ রোদে থাকতে পারি না। অসহ্য গরম লাগে। গরমে শরীরের ঘামে গায়ের জামা, পরনের লুঙ্গি ভিজে যায়। ঘরে শুয়ে থাকলে সংসার চালাবো কি করে ? সংসারে বউ, ছেলে মেয়ে নিয়ে ৪ জন খাওনের লোক। আয় রোজগার কমে গেছে। এই গরমে দিনে ২০০/৩০০ টাকার বেশী রোজগার করতে পারছি না। ১২০০’ শ টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে ফুলবাড়িগেট মীরের ডাঙ্গায় থাকি। স্ত্রী পরের বাসায় কাজ করে যা পায় আর নিজের সামান্য রোজগার দিয়ে কোনমতে সংসার চালাচ্ছি।

একই সড়কের আরেক রিক্সা চালক ইউনুস মিস্ত্রি ওরফে লিটন। বয়স ৬৫ বছর। তিনি বলেন, কর্মক্ষম হওয়ার পর থেকে সড়কে রিকশা চালাতে শুরু করি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে পরিবারের সদস্য ৮ জন। এমন গরম আগে কখনও দেখিনি। গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে। রোডে রিক্সা নিয়ে না নামলে খাবো কি? আয় রোজগার কমে গেছে। টুকটাক করে ধার দেনা করে চলছি।

ভ্যানচালক আবুল কালাম। বয়স ৬৭ বছর। স্ত্রী সন্তান নিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩ জন। ফুলবাড়ীগেট কুয়েট সড়কে ভ্যান চালান ৪৭ বছর ধরে। আবুল কালাম বলেন, ৪৭ বছরের ভীতর এমন গরম দেখি নাই। সংসারে আয় রোজগারের কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রচন্ড গরমে রৌদ্রের তাপ সহ্য করে খাটতে হচ্ছে।

নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় কাজ করা ৩৯ বছর বয়সী নির্মাণ শ্রমিক মেজবা বলেন, এই গরমে কাজ করতে জীবন বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজ না করে উপায় নেই। খাবো কি? স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। ঘরে বসে থাকলে সংসার চলবে না। পেটের দায়ে তাই কাজ করছি।

একই সঙ্গে কাজ করা ওমর আলী বলেন, দায় না ঠেকলে এই গরমের ভীতর রোদে কেউ কাজ করতে আসে? সংসারে আমরা ৪জন। অসহ্য গরমে কাজ করতে মন চায় না। কিছুক্ষণ কাজ করার পর মনে হয় জীবন বের হয়ে যাচ্ছে। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে। এমন গরমে প্রতিদিন কাজও করতে পারছি না। কাজ করতে মনও চাইনা শরীরেও কুলায় না। কিন্তু উপায় নেই। কাজ না করলে সংসার অচল হয়ে যাবে।

তীব্র তাপদাহে নগরীর একটি সড়কে কাজ করা দিনমজুর পারভীন বলেন, ৩ মেয়ে আর স্বামী নিয়ে আমার সংসার। ২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে খালিশপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকি। স্বামী অসুস্থ। কাজ করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে এই গরমের ভীতর কাঠ ফাটা রোদে রোডে কাজ করছি। দৈনিক হাজিরা পায় ৪৩০। এই দিয়ে কোন মতে সংসার চালাচ্ছি।

 

খুলনা গেজেট/এইচ

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!