শাসক দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের হামলায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মহানগর বিএনপির সদস্য খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিকসহ ১৩৭ জনকে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি প্রদান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হচ্ছে। তছনছ করা হয়েছে মৎস্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আছিয়া সী ফুড। দুটি বিএনপি অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রেল স্টেশনে ভাংচুর চালানোর অভিযোগ এনে জিআরপি থানায় এবং সংঘর্ষের অভিযোগে দৌলতপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। শত বাঁধা ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ সফল করার পরেও পুলিশ ও শাসক দলীয় ক্যাডারদের সম্মিলিত তান্ডবে এখনও খুলনাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা।
তিনি বলেন, কর্মসূচি সফল করতে আমরা সমাবেশের আগেই একাধিক দফায় পুলিশ প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সহায়তা চেয়েছিলাম। পুলিশ কমিশনার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্ত তারা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। লঞ্চ চলাচল, ট্রলার চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। খুলনা আসার পথে নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়েছে। অনেক স্থানে পুলিশও বিএনপি কর্মীদের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে। সকালে আওয়ামী লীগ প্রেস কনফারেন্স করে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেখান থেকে বিএনপির নিউজ কাভারেজ করার কারণে প্রচ্চন্নভাবে সাংবাকিদের শাসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। খুলনা জেলার পরিস্থিতি তুলে ধরেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, খুলনা মহানগরীর সকল থানায় আওয়ামী তান্ডবলীলা চলেছে। দিনভর সশস্ত্র অবস্থায় মোটরসাইকেল মহড়া ও অশালিন, কুরুচিপূর্ণ গালিগালাজ দিয়ে শ্লোগান দিয়েছে তারা। আগে থেকেই গণপরিবহন বন্ধ ছিল। প্রায় অচল নগরীতে জরুরী প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বেড়িয়েছিলেন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মহড়ায় তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছেন। আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তাকিুল ইসলাম জহিরের মালিকানাধিন আছিয়া সী ফুড। সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সদস্য কে.এম হুমায়ুন কবিরের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে কাউন্সিরর হাফিজুর রহমান মনির বাসভবনেও।
খানজাহান আলী থানা বিএনপি নেতৃবৃন্দ নদীপথে খুলনায় আসছিলেন। খালিশপুরের আলমডাঙ্গা ও পরবর্তীতে তারা ট্রলার ঘুরিয়ে বিএল কলেজ ঘাটে নেমে নতুন রাস্তা ধরে মিছিল করে খুলনায় আসার পথে দ্বিতীয় দফায় বিডিআর ক্যাম্পের সামনে তাদের ওপর হামলা হয়।
হামলায় আহতরা হলেন আলমগীর হোসেন, মোঃ মাসুম বিল্লাহ, বিল্লাল হোসেন, হাবিবুর রহমান বিপ্লব, স্বাধীন মোল্লা, আবুল হায়াত শুভ, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ তাজিন, মামুন, মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ আলী হোসাইন, মোঃ সবুজ শেখ, মোঃ সজল শেখ, ওয়াহিদুল ইসলাম ওয়াহিদ, জাফর শেখ, আলিমুর রহমান, নুর ইসলাম, জাহাঙ্গির হোসেন খোকা, আলম মোল্লা, মঞ্জুরুল ইসলাম মোল্লা, মনু শেখ, আশিকুর রহমান, আব্দুস সামাদ মাস্টার, শেখ ইকরাম হোসেন, শেখ শাহাজাহান, মনিরুল ইসলাম মনু, ইলিয়াস সেখ, সেখ আলমগীর হোসেন, বাবু শেখ, ইমরান হোসেন, শাহরিয়ার, জাহাঙ্গির হোসেন, আবির হোসেন, বাচ্চু, সুজন, জাহিদ, বাপ্পি, শামিম, মোঃ রিপন, সিয়ামুর রহমান, ফয়সাল, মোঃ সোহাগ হোসেন, বাবুল হাওলাদার, মোঃ ফারুক শেখ, মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, শেখ আজিজুর রহমান, মোঃ জব্বার, শেখ শাহাজাহান, মোঃ সাইদুজ্জামান, বারেক হাওলাদার, মোঃ শহীদ শেখ, মোঃ জসিম, মিলন গুরুত্বর আহত হন।
৩১নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আমীন আহমেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। ১১নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ইউনুস আলী ও সাইফুল ইসলাম, ৯নং ওয়ার্ডের সুমন হাওলাদার, তাজ গাজী, শুভ তালুকদার, রাব্বি হোসেন।
আড়ংঘাটা থানার মতলেবুর রহমান মিতুল, আয়েশা বেগম, ফিরোজা খাতুন, নারায়ন মিশ্র, হান্নান মোড়ল, রকিবুল ইসলাম, হৃদয় বিশ্বাস, এহসানুল ইসলাম শিথিল, মহিদুল ইসলাম, শাহজালাল বাদশা, মানিক সরদার, মোঃ ইখলাস মোড়ল, হাবিব শেখ, আঃ রহিম, গোলাম রব্বানী, সোহান শেখ, শেখের উপর নতুন রাস্তার মোড়ে ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান প্রিন্সের নেতৃত্বে হামলা হয়।
১০নং ওয়ার্ডে মুনসুর বাবলু, আব্দুল মতিন বাচ্চু ও আলী আজগর, ১নং ওয়ার্ডের শাহরিয়ার তপু, পারভেজ মিজান, হিমু, বাবু, মঈনুল, মাজেদুল ইসলাম হামলা আহত হয়েছেন। আড়ংঘাটা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক রাজা উর রহমান প্রিন্সও সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন।
এছাড়া পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়ীবাড়ী গিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও মামলায় আসামী করার হুমকি দিচ্ছে। মহানগর যুবদল নেতা সালাউদ্দিন, ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম হাওলাদার, আব্দুল জলিল প্রমুখের বাড়ীতে যেয়ে হুমকি দেয়ায় গৃহ ছাড়া তারা।
জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান জানান, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশারকে গুরুতর আহত করেছে। পাইকগাছা বিএনপির সভাপতি ডা. আব্দুল মজিদ, সাধারন সম্পাদক এনামুল হক, ডুমুরিয়া সভাপতি মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, দিঘলিয়া সভাপতি সাইফুর রহমান মিন্টুর বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও মহড়া হয়েছে। ব্যাপক তান্ডব চলেছে ফুলতলা উপজেলায়। তেরখাদা, দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, রূপসা সর্বত্র হামলা ও মহড়া ঘটেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম মনা বলেন, বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গফফার বিশ্বাস জানিয়েছেন, কোন পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে তা আমি জানিনা। আর মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেছে, শ্রমিক ইউনিয়ন কোন ধর্মঘট ডাকেনি। মূলত সরকারের চাপে বিএনপির গণসমাবেশকে বানচাল করতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।