খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়ার ২৩ দিনের মাথায় নবজাতককে উদ্ধার করেছ পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পাড়বিষ্ণুপুর এলাকা শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই শিশুটির পালক বাবা মাকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে চুরি করা সেই নারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাডাঙ্গা থানার এস আই তোফায়েল আহমেদ তোফু জানান, হারিয়ে যাওয়া ওই শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। বিভিন্নস্থানে সোর্স লাগানো ছিল। সোর্স মারফত আমরা খবর পাই হারিয়ে যাওয়া শিশুটি নড়াইল কালিয়া উপজেলার পাড়বিষ্ণুপুর এলাকার রাশেদ মোল্লার বাড়ির ভাড়াটিয়া রানু খানম ও লালন মোল্লা দম্পত্তির কাছে রয়েছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে শিশুটির মামা মোস্তফাকে সেখানে পাঠানো হয়। তিনি আমাদের সংবাদ দিলে আমরা সেখানে যাই।
তিনি আরও বলেন, শিশুটির পালক বাবা মা নি সন্তান। ১২ বছর ওই দম্পত্তির বিয়ে হয়েছে কিন্তু তাদের কোন সন্তান নেই। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় র্যাবের সহায়তায় আমরা পাড়বিষ্ণুপুর এলাকার রাশেদ মোল্লার বাড়িতে পৌঁছায়। শিশুটির সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি। তারপর স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটি বের হয়ে আসে। স্থানীয়রা জনায়, শিশুটি তার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঢাকা থেকে ক্রয় করেছেন। তিনি আরও বলেন, লালন মোল্লা পেশায় একজন কৃষক। শিশুটি কিনতে যে টাকা দিয়েছেন সেটি দেওয়ার মতো তার কোন ক্ষমতা নেই। শিশুটি কিভাবে নড়াইলে এবং কার কাছ থেকে কিনেছেন সেটি জানার জন্য পালক বাবা ও মা কে থানা হেফজতে নেওয়া হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মমতাজুল হক বলেন, নবজাতক চুরির ঘটনায় বাবা ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলায় ৫ জন কারাগারে রয়েছে। তিনি বলেন, এটা পুলিশের একটা বড় সাফল্য। শিশুটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে রয়েছে। তবে ঘটনার জন্য যে দায়ী তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নবজাতকের মা রানিমা বেগম জাননে, তিনি তার বাচ্চাকে চিনতে পেরেছেন। বাচ্চাকে ফিরে পাওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মা।
রানিমা জানান, ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরের দিকেই তিনি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেন। বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। তারা ছাড়পত্র নিয়ে বাগেরহাট ফকিরহাটে বাড়িতে যাওয়ার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের গেটে আসেন। এসময় নবজাতকের বাবা তুরাব আলি ও আত্মীয়স্বজন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা নিয়ে কথা বলছিলেন। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায় তা হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছায়। নবজাতকটি ছিল তার খালার কোলে। হাতাহাতি ঠেকাতে সে কোলে থাকা নবজাতককে পাশের এক নারীর কাছে দেয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বাচ্চা নিতে গিয়ে দেখে ওই নারী সেখানে নেই। মুহূর্তের মধ্যে পুরো হাসপাতালে শোরগোল পড়ে যায়।
খুলনা গেজেট/ এসজেড