খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  এনআইডির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে কাফরুল থানায় মামলা
  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ
পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা বহির্ভূত অর্ধশতাধিক ইটভাটা থাকলেও নিরব ভূমিকায় প্রশাসন

খুলনায় ইটভাটায় গিলছে নদী, পুড়ছে পরিবেশ

তরিকুল ইসলাম

খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষমতা, অর্থ ও আধিপত্যের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা নদীর তীর ও খাসজমি দখলসহ ঘনবসতি এলাকা এমনকি হাসপাতাল- স্কুলের পাশবর্তী স্থানে গড়ে তুলেছে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একশ’ বৈধ ইটভাটা থাকলেও অধিকাংশতে মানা হচ্ছে না যথাযথ নীতিমালা। এসব ইটভাটায় বিনষ্ট হচ্ছে চির চেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ, হারিয়ে যেতে বসেছে জীব বৈচিত্র। এছাড়া কালো ধোয়া, গ্যাস ও ধুলায় মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার মানুষ। তাছাড়া সংকুচিত হচ্ছে নদী; পাল্টে যাচ্ছে এর গতিপথ। চোখের সামনে এসব ইটভাটা চালু থাকলেও অজানা কারণে নিরব রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করতে দেখা গেলেও বন্ধ হয়নি এসব অবৈধ ভাটা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতবাড়ির পাশে ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় প্রায় সর্দি কাঁশি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গাছের ফল-ফলাদিও কমে যাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী খুলনা জেলার নয় উপজেলার মধ্যে বৈধ ইটভাটা রয়েছে রূপসায় ৬৩টি, ডুমুরিয়ায় ২০টি, বটিয়াঘাটায় ৫টি, তেরখাদায় ৯টি ও দিঘলিয়ায় ৩টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুইশ’ মিটারের মধ্যে ঘনবসতি এলাকায় গড়ে তোলার পরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের বৈধ তালিকায় থাকার অভিযোগ রয়েছে ইটভাটা।

তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ৫টি উপজেলাসহ পাইকগাছা, ফুলতলা ও কয়রায় অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। যা পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা বহির্ভূত হওয়ার পরেও স্থানীয় প্রশাসন সেগুলো বন্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাইকগাছার এআরবি ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, এসকেবি ব্রিকসসহ ১৪টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এগুলোর কোনটিই পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় নেই। যার অধিকাংশই ঘনবসতি এলাকায় ও কৃষি জমির ওপর। যদিও উপজেলা প্রশাসন বলছে ৭টির লাইসেন্স রয়েছে। তবে চলতি বছরে এ উপজেলায় ৬টি ইট ভাটা মালিককে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ফুলতলার সুপার ব্রিকস, জেবি ব্রিকস, ইউনাইটেড ব্রিকস, প্রিন্স ব্রিকস, একতা ব্রিকস, খানজাহান আলী ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ভাটা চালু রয়েছে। রূপসা, ডুমুরিয়া ও তেরখাদার অধিকাংশ ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে নদীর কিনারায়।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫শ’ মিটারের মধ্যে ঘনবসতি এলাকায় রয়েছে কয়রার এবিএম নামের ভাটা। খুলনার এসব অবৈধ ভাটা পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সচেতনমহল জানিয়েছে।

অপরদিকে পাউবো সূত্রে জানা যায়, খুলনার ভদ্রা, হরি, শৈলমারী, আতাই ও আঠারোবেকি নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ৫০টি ইটভাটা। এর মধ্যে রূপসা উপজেলায় রয়েছে ১৮টি, ডুমুরিয়ায় ১৮টি, তেরখাদায় ১১টি ও দিঘলিয়ায় ৩টি।
অভিযোগ রয়েছে, মালিকরা নদীতীরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী খাসজমিও দখলে নিয়েছেন। চরের মাটি কেটে ভাটায় তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ দখলের কারণে নদীর গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হলেও উচ্ছেদ কার্যক্রম থমকে গেছে। এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখল করে স্থাপন করা ১৪টি ইটভাটা উচ্ছেদে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৪ ডিসেম্বর এ আদেশ দেন। আদেশে আগামি ৬০ দিনের মধ্যে ১৪ টি ইট ভাটার অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আগামী ২২ ফেব্রুয়ারী পরবর্তি দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। ওই সকল ইটভাটা গুলোতে নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভাটা পরিচালনা করায় জনস্বার্থে গেল বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী রীটটি দায়ের করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

খুলনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার বলেন, অনেক ভাটার লাইসেন্স আপডেট নেই। আপডেটের জন্য কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে, হাতে পেতে দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডুমুরিয়ার যেসব ভাটার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো চলার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া পাইকগাছার অধিকাংশ ভাটার ৭/৮ বছর পূর্ব থেকে লাইসেন্স নেই, কিভাবে চালু রেখেছে সেটা আমার জানা নেই।

আদালতের নির্দেশে কার্যকরের বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা নদীর খাস জমিতে লাল পতাকা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি। ওই সীমানার মধ্যে তাদের কাজ না চালানোর জন্য ভাটামালিকদের বলা হয়েছে । এছাড়া চলতি বছরে ৪টি ভাটায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানা বলেন, আমি নতুন, এসি (ল্যান্ড) নেই। তাছাড়া পাট, সারসহ নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকা ইটভাটাগুলোর খোঁজ নিতে পারিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ মারুফ বিল্লাহ জানান, বৈধ ইটভাটার তালিকা ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অবৈধগুলো নির্মূলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ঘনবসতি এলকায় অবৈধ ইট ভাটার ক্ষতিকর ধোয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্কদের মধ্যে চর্মরোগের প্রবণতাও দেখা যায়। ধোয়ার কারণে ফসল, গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে। জলাশয়ের মাছের ক্ষতি হয়। সর্বোপরি ঘটিত বায়ু দুষণ মানুষসহ পুরো ইকোসিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা নিজেরা স্থাপনা সরিয়ে না নিলে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া বিআইডব্লিউ দখলদারদের উচ্ছেদে কাজ করছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!