খানজাহান আলী থানার মাত্তমডাঙ্গা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুনজীর আহমেদ ওরফে মুনজীর মাষ্টার হত্যা মামলায় ২ আসামি আনুয়ার ও আশ্রাফকে যাবজ্জীবন করাদন্ড ও ৫০ হাজার জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
এ হত্যাকান্ডের বিস্ফোরক অংশে ওই দুই আসামিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন গিলাতলা ১ নং কলোনীর মো. সরোয়ার হোসেন ওরফে সানোয়ারের ছেলে আনুয়ার হোসেন ও একই এলাকার মো. গোলাম জিলানী মল্লিকের ছেলে মো. আশ্রাফ আলী।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদা খাতুন এ রায় ঘোষণা করেন। হত্যাকান্ডের ১৭ বছর পর এ রায় ঘোষণা হলো।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার ৬ জন আসামির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করতে না পারায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, বাদশা শেখ, সোহেল, রুবেল, মেজবাহ উদ্দিন মুকুল, আহাদ ও একেন্দার ওরফে এসকেন।
হত্যাকান্ডের পরদিন নিহতের বড় ভাই অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি পৃথক মামলা দায়ে করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে দাউদ, মঈন ও নেয়ামুল ইসলাম কুটি ক্রসফায়ারে নিহত হয়। অপরদিকে এ মামলার অপর আসামি আরিফুর রহমানকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
যে কারণে হত্যা করা হয় মুনজীর মাষ্টারকে
মুনজীর মাষ্টার মাত্তমডাঙ্গা এলাকার শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি খানজাহান আলী থানার তৎকালীন বিএনপি সভাপতি ও স্থানীয় এজিএম যুব সংঘের সদস্য ছিলেন।
চার্জশিটের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০০০-২০০৬ সাল পর্যন্ত খুলনার মানুষ সব সময় চরমপন্থীদের আতঙ্কে দিন পার করত। এরই মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় নেতা মুনজীর মাষ্টারের কাছে চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় পূর্ব বাংলার কিছু নেতা। তাকে হত্যার করারও হুমকি দেয় ওই নেতারা। এ সংবাদ জানতে পেরে মুনজীর মাষ্টার স্থানীয় সাংবাদিক মনিরকে বিষয়টি অবগত করেন। মনির বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে পূর্ব বাংলার নেতাদের নাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে থাকে। এরপর শুরু হয় তাকে হত্যার পরিকল্পনা।
যেভাবে হত্যা করা হয়
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার দিকে মুনজীর মাষ্টার মাত্তমডাঙ্গা যুব সংঘের ভেতরে গিয়ে অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলতে থাকেন। রাত সোয়া ৯ টার দিকে প্রধান ফটক দিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী যুব সংঘের ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। এরমধ্যে দু’টি বোমা মুনজীর মাষ্টারের হাতে পিঠে লাগে।
মারাত্মক জখম অবস্থায় যুব সংঘের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর রাত ১ টার দিকে তিনি মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে তিনি ভাই বেনজীর আহমেদের কাছে সব ঘটনার বিবরণ বলে যান।
জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিহতের ভাই বেনজীর আহমেদ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় থানায় দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করেন।
হত্যা ও বোমা অংশের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন খানজাহান আলী থানার এস আই মো: ফারুকুল ইসলাম। তিনি একই বছরের ১২ ডিসেম্বর বোমা ও ২০০৬ সালের ৩০ জুন মুনজীর মাষ্টার হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সমাজ বিরোধী কাজের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। অপরদিকে আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে জড়িত থাকায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। এসকল কাজের বিরোধীতা করায় তাকে ওই সকল সদস্যরা হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে এবং পরে তাকে হত্যা করে। যা এ হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই