খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

খুলনা-৬ আসনে তিন প্রার্থী আলোচনায়, এগিয়ে নৌকা

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা

আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে খুলনা-৬ নির্বাচনী এলাকা পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌছে দেওয়া হয়েছে শনিবার বিকেলেই। এর আগে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশে ব্রিফিং করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমীন।

সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬, সংসদীয় আসন ১০৪ গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে মোট ৭ জন প্রার্থী পরষ্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন একই দলের জিএম মাহবুবুল আলম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), বিএনএম’র প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু সুফিয়ান (আম) ও তৃণমূল বিএনপি’র নাদির উদ্দিন খান (সোনালী আশ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে স্ব-স্ব দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আচারণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন।

নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি দৃশ্যত ভোট বর্জন করলেও প্রথম থেকেই আসনটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটাদের মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তবে এবার নির্বাচনে আসনটি থেকে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমূখী। নৌকার সাথে ঈগল প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। আবার কোথাও কোথাও নৌকার সাথে নোঙর প্রতীকের লড়াই হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক, ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ২০০৮ সালে আ.লীগের অ্যাড. সোহরাব আলী সানা, ২০১৪ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর নির্বাচনে ফের আ.লীগের মো. আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচিত হন। এক সময় জামায়াত অধ্যুষিত হিসেবে চিহ্নিত আসনটিতে গত ৯ম, ১০ম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা তাদের বিজয়ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি নির্বাচনেই সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে চমক দেখিয়েছে। এবারও যার ব্যাত্যয় হন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন, প্রার্থী পরিবর্তন করে। এবার আসনটি থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তৃণমূলের রাজনৈতিক সংগঠক দু’বার ইউপি চেয়ারম্যান, একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সদস্য সচিব গণমানুষের অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ মো. রশীদুজ্জামান মোড়লকে।

একসময়ের রাজপথের তুখোড় ছাত্রনেতা গণমানুষের অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল আশির দশক থেকে নিজ জনপদে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় মনোনয়নে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এ পরীক্ষিত সৈনিক নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলম ঈগল প্রতীক নিয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

তবে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকরা মনে করছেন, সারা দেশের অভাবনীয় উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সাধারণ ভোটাররা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী মো. শীদুজ্জামানের নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন। তবে সেক্ষেত্রে খানিকটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জামায়াত-বিএনপি’র ভোটাররা। উভয় প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা তাদেরকে কাছে আনার চেষ্টা করছেন। উৎসাহ দিচ্ছেন, ভোট কেন্দ্রমুখী করতে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ভোটারদের উদ্দেশ্যে ভোটবর্জনের লিফলেট প্রচার করেছে। সেক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি ও অবস্থান নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনএম এর (নোঙ্গর) প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ’র অবস্থানও খানিকটা শক্ত। অনেক এলাকায় তিনিও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। যেকোন প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে তার নোঙর প্রতীকের ভূমিকাকেও খানিকটা বড় করে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, স্বতন্ত্র প্রার্থী খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম যাচাই-বাছাইতে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় পর দলের একাংশের পশাপাশি দলের বাইরে তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় নতুন সমীকরণ শুরু হয়। যদিও আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের বিজয় ঠেকাতে তা কোন প্রভাব ফেলবেনা।

জয়ের ব্যাপারে মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবার নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ ভালো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ও কয়রা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ সংসদীয় আসন-১০৪ গঠিত। সর্বশেষ আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৯ জন। এছাড়া আসনটিতে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৪২ টি ও ভোট কক্ষ রয়েছে ৯২২ টি। সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরবিচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!