খুলনার বাসিন্দা সাহিল। কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় থাকেন। রবিবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে টিকেট নেয়ার জন্য সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টারে আসেন। টিকেটের দাম শুনে হতবাক তিনি। জানান, পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় যেতে এখন আর বেশী সময় লাগে না। কমেছে রাস্তার দূরত্বও। অন্য পরিবহনের এসি বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ৯০০ টাকা হলে একই গন্তব্যে সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস ভাড়া কেন ১২০০ টাকা হবে। বিরক্ত হয়ে তিনি অন্য বাসের কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কেটে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
একই সময়ে কথা হয় গ্রীনলাইন পরিবহনে টিকেট নিতে আসা রবিউল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, টুঙ্গিপাড়া বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। একই দূরত্বে দু’টি পরিবহনের ভাড়ার পার্থক্য ৩০০ টাকা। তবে বাস ভাড়া এত বেশি হওয়া উচিত নয়। বিরক্ত হয়ে দুপুরে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে ঢাকায় যাবেন বলে তিনি জানান।
রবিবার খুলনার কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী বহন করছে না খুলনার পরিবহনগুলো। নানা অজুহাত দেখিয়ে ননএসি বাস নির্ধারিত ভাড়া থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। ১৭ মে পদ্মা সেতু পার হয়ে ১৩ রুটের ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেখানে কিছু ত্রুটি থাকায় আবারও ২০ জুন ভাড়ার তালিকা সংশোধন করা হয়। সেখানে নন এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও রবিবার বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’র ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান মন্টু বলেন, মালিক পক্ষ এখনও ভাড়া চূড়ান্ত করেনি। বিআরটিএ যে ভাড়া নির্ধারণ করেছেন সেটি ভুল। প্রতিটি গাড়ির যাত্রীদের নদী পারাপারে আগে লঞ্চ ভাড়া ১৮০০ টাকা গুণতে হতো। কিন্তু এখন সেতুর টোল গুনতে হচ্ছে ২৪০০ টাকা। অতিরিক্ত ৬০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ ৫২ আসনের ভাড়া ৫৩৭ টাকা করে নির্ধারণ করেছে। ৪০ সিটের জন্য নয়। যদিও বিআরটিএ’র বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে, যাত্রী প্রতি ৫৩৭ টাকা ভাড়া ৪০ সিটের বাসের জন্য।
ইমাদ পরিবহনের কাউন্টার মাষ্টার শরীফ আল মামুন বলেন, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে নন এসিতে ৬০০ টাকা ও এসিতে ৭০০ টাকা নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। বিআরটিএ যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে সেটি মালিকপক্ষকে পরিস্কার করে বলেনি। ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে সেখানে আবারও টোল দিতে হবে। ঢাকা পৌঁছানোর আগে পরিবহনগুলোকে বিভিন্নস্থানে টোল দিতে হয়। তবে কিছু দিনের মধ্যে মালিকপক্ষ চূড়ান্ত ভাড়া নির্ধারণ করবে।
সেন্টমার্টিন কোম্পানীর কাউন্টার মাষ্টার দিলীপ কুমার দাস বলেন, খুলনা থেকে ঢাকায় তাদের একটি গাড়ি যায়। সবেমাত্র পদ্মাসেতু চালু হয়েছে। ভাড়া এখনও কোম্পানী নির্ধারণ করেনি। আরিচা হয়ে ঢাকায় তাদের যে বাস যেতো সেটির প্রতি আসনের ভাড়া ছিল ১৪০০ টাকা। সেখানে ২০০ টাকা কমানো হয়েছে। এসি গাড়ির ভাড়া নির্ধারিত হয় গাড়ি ও এসির ওপর নির্ভর করে। তাদের গাড়ি পদ্মা সেতু পার হয়ে গাবতলী পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। তবে টিকেট মূল্য কম নেওয়া বা বাড়ানো সেটি মালিকপক্ষের ব্যাপার।
সোহাগ পরিবহন খুলনার ইনচার্জ ইয়ামিন বলেন, পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকার দূরত্ব কমেছে ৪০ কিলোমিটার। এ বিষয়টি বিবেচনা করে নন এসিতে বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা ও এসি বিজনেস ক্লাসে ২০০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসি গাড়ির ভাড়া নির্ধারিত হয় গাড়ির কন্ডিশনের ওপর। এটির ভাড়া মালিক নির্ধারণ করে। তবে এর কম হবে না বলে তিনি মনে করেন।
গ্রীনলাইন খুলনার ম্যানেজার আইয়ুব হোসেন বলেন, খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব কমেছে এটা সঠিক। দূরত্বের কথা বিবেচনা করে এসি ইকোনমি গাড়ির ভাড়া ২৫০ টাকা কমিয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। আগে আরিচা পার হয়ে যে গাড়ি ঢাকায় যেত তার ভাড়াও কামানো হয়েছে। বর্তমানে ডাবল ডেকার ও হাইডেক বিজনেস ক্লাসের গাড়ির ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর থেকে আর কামনো হবে না।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহন কোম্পানিগুলো যেসব তথ্য বা যুক্তি দেখিয়ে বর্ধিত ভাড়াকে যৌক্তিক প্রমাণের চেষ্টা করছে তা সঠিক নয়। আরিচা রুটের সাথে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার যাওয়া ভাড়ার তুলনা অযৌক্তিক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর খুলনার সাথে ঢাকার দূরত্ব ও সময় দুটোই কমেছে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের স্বার্থে এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র হস্তক্ষেপ করা উচিৎ।
খুলনা গেজেট/ টি আই