খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

কয়লার দাম ঊর্ধ্বমুখী : ইটের বাজারে অস্থিরতা, দফায় দফায় বাড়ছে দাম

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর

অভয়নগরে হু হু করে বাড়ছে কয়লার দাম। ইটের বাজারের চলছে অস্থিরতা, নাগালের বাইরে দাম। এ এলাকায় পরপর চার দফায় কয়লার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্য দিকে ইটের দাম ও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ অঞ্চলে নভেম্বর থেকে শুরু হয় নির্মাণ কাজের মৌসুম। তাই ইট ভাটাতে নতুন ইট ক্রয় করতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে। ভাটা মলিকরা ইট তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। এ সময় সারা দেশে পুরোদমে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে ব্যবহৃত হয় বিপুল পরিমাণ ইট। আমদানীকৃত কয়লার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়েছে ইটের বাজারে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতি ইউনিট ইটের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। কয়লার দাম বেশি বলে ইট ভাটা মালিকরা ইটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকেই বলছে ফেব্রয়ারী থেকে ইট তৈরি করবে না।

ইটভাটা মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছর এপ্রিল থেকে বিশ্বব্যাপী বাড়তে শুরু করে কয়লার দাম। ওই সময়ে টনপ্রতি কয়লার দাম ছিল উন্নত মানের ইন্দোনেশিয়া ৯ হাজার টাকা, সাউথ আফ্রিকার কয়লা ৮ হাজার টাকা। বর্তমানে একই মানের কয়লা টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২১ হাজার টাকায়, যার কারণে দেশের বাজারে ইট উৎপাদনের খরচও বেড়ে গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, পাবনা, মেহেরপুর ও নাভারণ থেকে কয়লা কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, কয়লার দাম বেশি থাকায় এবার দেরিতে ভাটায় আগুন দেয়া হয়েছে। যে পরিমান ইট প্রতি বছর তৈরি করি তা এবার করতে পারবনা। এক দু গাড়ি কয়লা কিনে কোনরকমে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাটায় কোন কয়লা মজুদ করতে পারছি না। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ ইট তৈরি করি। কয়লার দাম বেশি থাকায় এবার ৬/৭ লাখের মত ইট তৈরি হবে। তার বেশি হবে না। প্রথমে যখন কয়লা কিনতে আসি তখন ভাল মানের কয়লা ১০ হাজার টাকা ছিল, এরপর দ্বিতীয় বারে কয়লার দাম হয়ে যায় ১৪ হাজার টাকা প্রতি টন। তৃতীয় দফায় কয়লার দাম ১৬ হাজার টাকা ঠেকে। এখন কয়লার দাম ২১ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিনিয়ত আমদানীকারকরা কয়লার দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।

উপজেলায় কয়লা আমদানি করছে উত্তরা প্রাইভেট লিমিটেড, সাহারা এন্টার প্রাইজ, শেখ ব্রাদার্স, মোশারেফ এন্ড ব্রাদার্স, ইউনাইটেড কোল লিমিটেড, এ্যালিগেন্ট কোল, বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আফিল ট্রেড ইন্টান্যাশনাল, সৈনিক ট্রেডার্স, জেএইচএম ইন্টান্যাশনাল, সিলেট সিন্ডিকেট, ইন্ডিয়ান কয়লা এনেছে জাফিদ্রী এন্টারপ্রাইজ।

কয়লার দাম বেশি থাকায় এলাকার বেশ কয়েকটি ইট ভাটা ইট পোড়ানে চালু করতে পারেনি। তারমধ্যে মোরাদ ব্রিকস, মোল্যা ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, আলী ব্রিকস, কাজী ব্রিকস, ইতনা ব্রিকস, এমইডি ব্রিকস। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু ভাটাও এখনও চালু হয়নি বলে জানা গেছে ।

আবাসন প্রকল্পের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইটের দাম এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এক সময় প্রতি ইউনিট ইট ৮ টাকায় ক্রয় করলেও বর্তমানে একই মানের ইট কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে ১১ টাকা। আবাসন খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইটের চাহিদা থাকায় ফ্ল্যাট তৈরিতে খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বেশ কয়েকটি ইটভাটায় কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে ইটভাটার জন্য মালিকরা কয়লা কিনে রাখেন। এ বছর কয়লার দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় কয়লার মজুদ তেমন করতে পারেনি। যার কারণে প্রতিটি ইট তৈরিতে খরচ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আগের তুলনায় অর্ধেকেরও কম উৎপাদন হচ্ছে ইট। ফলে চলতি সময়ে নির্মাণ মৌসুমে সারা দেশেই ইটের সংকট থাকবে বলে মনে করছেন ইটভাটা মালিকরা। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে অনুপাতে দাম বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় ইটভাটাগুলো চলতি মৌসুমে লোকসানের মধ্যে পড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

ইটভাটা মালিকদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রতিটি মাঝারি মানের প্রতি ইউনিট ইট বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা (মাঠ পর্যায়ে)। বর্তমানে একই মানের ইট বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায়। অন্যদিকে ভালো মানের ইটের দাম ছিল ৮ থেকে ৯ টাকা। বর্তমানে একই মানের ইট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১১ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো মানের ইট ইউনিট প্রতি ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে নির্মাণ খাতে ইটের চাহিদা থাকলেও বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ইটভাটাগুলোয় বর্তমান মৌসুমে ইট উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কয়লার দাম না কমলে দেশে ইটের দামও কমবে না। দেশের আবাসন ও নির্মাণ খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে এখাতে সংশ্লিষ্টরা।

নওয়াপাড়া কয়লা ব্যবসায়ীর মধ্যে কয়েকজন জানান, কয়েক দফায় আমদানীকারকেরা কয়লার দাম বাড়িয়েছে। এবার ইট ভাটা মালিকরা ইট তেমন তৈরি করতে পারছে না। যে কারণে তাদের বকেয়া টাকা উত্তোলনের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তাদের কোটি কোটি বকেয়া টাকা তুলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সহ সভাপতি আলহাজ্ব নাজিরউদ্দিন বলেন, আমার ৩টা ভাটা। আমি প্রতিবছর ২ কোটি ১০ লাখ ইট তৈরি করি। এবার এর অর্ধেকও ইট বানাতে পারবো না। আমদানি করা কয়লার দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে, যার কারণে ইটভাটায় বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হলেও সেভাবে ইটের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ইটভাটাগুলো বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যপারে সাহারা এন্টার প্রাইজের নওয়াপাড়া শাখা অফিসের ইনচার্জ মোহাম্মদ রিদুয়ান কবির জানান, এই সিজিনে প্রথম থেকেই কয়লার দাম ১৭ হাজার ১৮ হাজার ১৯ হাজার ২০ হাজার টাকা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে চায়নারা কয়লা ক্রয় করেছে। যে কারণে দাম বেশি। তাছাড় করোনার একটা প্রভাব রয়েছে এই সেক্টরে। জ্বালানী তেলের দাম, জাহাজ ভাড়া বেশি হওয়ায় কয়লা দাম বেশি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!