খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

কয়রায় পা‌নিব‌ন্দি ২৫ হাজার মানুষ, ৩৫ কো‌টি টাকার ক্ষ‌তি

তরিকুল ইসলাম ও নিতিশ সানা, কয়রা

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম নদীর লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ‘ইয়াস’ এর তান্ডবে নয়, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ, কয়রা ও শাকবেড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি ৬/৭ ফিট বৃদ্ধি পেয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে ১১ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও পানি উন্নয়ন বো‌র্ডের জরাজীর্ণ বাঁধ উপ‌চে লোকালয় প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন গ্রাম সহ মৎস্য ঘের প্লাবিত হচ্ছে।

লোনা পানি প্রবেশ করায় ফসলি জমি, মৎস্য, গবাদি পশুসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তারমধ্যে মৎস্য ঘের ডু‌বে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে। ২০৫০‌টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ডু‌বে প্রায় ১৫ কো‌টি টাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হ‌য়ে‌ছে। বাড়ি ঘরে জোয়ারের পানি ঢোকায় ৫ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেকে পানিতে আটকা পড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারছেন না।

বুধবার ১১টি পয়েন্ট ভেঙ্গে ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগীতায় ৮টি পয়েন্ট আটকাতে পারলেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া, পবনা এবং উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী নামক স্থান আটকাতে ব্যর্থ হয়। ফলে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরের জোয়ারে আরও ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।

ইয়াসের তান্ডবের ভয় কেটে গেলেও এখনও এ এলাকার মানুষের কাটেনি বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা। রাতের জোয়ারে আরও এলাকার দুর্বল বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার আশংকায় রয়েছেন এলাকাবাসি।

বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে কয়রা উপকূলে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে। এরপরই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রবল বেগে ঝড় না হলেও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে লোকালয়ের দিকে নদীর পানি ধেয়ে আসতে থাকে।

দুপুরের আগেই উপকূলবর্তী এলকার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে ঝড়ে কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কয়রা উপজেলার দশহালিয়ার তিন কিলোমিটার, মঠবাড়ি, তেতুলতলার চর, আংটিহারা, মঠবাড়ী, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহসিল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশির হাটখোলা, কাটমারচর, ২ নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পবনা, কাশির খালের গোড়া, হোগলা, উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী, শাকবাড়িয়া, সুতির অফিস, নয়ানি, খোড়ল কাটি, জোড়শিংসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে মানুষ আশ্রয় নেয়নি। তবে প্লাবিত হওয়ার পরে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে।

মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতের জোয়ারে আরও বিপদ বাড়তে পারে। ভেসে যেতে পারে বাঁধ থেকে দূরবর্তী গ্রামও। তারা অভিযোগ করে বলেন, ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে টেকসই বাঁধের দাবি করে আসলেও আজো দেখা মেলেনি। এছাড়া আম্পানের পর থেকে সেখানকার ৬ কিঃমি বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও কোন রকমে দায় এড়ানোর মত মাটি দেয়া ছাড়া তেমন কোন কাজ করা হয়নি।

সদর ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকার আঃ গণি বলেন, ঝড়ে বেশ কয়েক দফা ঘর ভেঙেছে। আম্পানেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী কোন সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় আমাদের বাঁধের উপর অবস্থান করতে হয়।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দশহালিয়া গ্রামে সকাল থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দূর্বল ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় লোকালয়। এখানকার বাঁধ সংস্কারের জন্য চেষ্টা করেও যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কাজের অনুমতি না মেলায় আজ এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানী জানান, শাকবাড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা, কাটমারচর, কাশির হাটখোলা, হরিয়ারপুর গাতির ঘেরী এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে চিংড়ি ঘেরে প্রবেশ করছে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমরা পানি আটকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মহারাজপুরস্থ প‌শ্চিম দেয়াড়া একতা সং‌ঘের সাধারণ সম্পাদক আল আ‌মিন জানান, আম্পানের আঘাতে ক্ষতি মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর আবার প্লাবিত হয়েছে। তিনি কয়রাবাসীকে রক্ষা করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

খুলনার কয়রা উপজেলার পিআইও সাগর হোসেন সৈকত বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বুধবা‌রে ৩৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। প‌রের দিন আরও কিছু গ্রাম প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে। ২৫ হাজার মানুষ পা‌নিবন্দী র‌য়ে‌ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কো‌টি টাকা ক্ষয়ক্ষ‌তির তালিকা তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছে। ক্ষ‌তির প‌রিমাণ আরও বাড়‌তে পারে।

উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে জরিপ অনুযায়ী প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। আর চাষিদের ক্ষতির পরিমান ১৫ কোটি টাকার বেশি। আজ দুপুরের জোয়ারে আরও বেশ কিছু মৎস্য ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে সেটি আমাদের হিসেবে নেই।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!