দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি। লেখাপড়ার স্বপ্ন থাকলেও পড়েছেন মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। অল্প বয়সেই বাবার সঙ্গে পরিবারের হাল ধরতে নেমে পড়েন মাছ ধরতে। বিভিন্ন খাল-বিল থেকে মাছ ধরে সেগুলো হাটে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে নিজেই বাজারে মাছ বিক্রি শুরু করেন। বাজারের পাশে খোলা জায়গাতে ঝুড়িতে মাছ বিক্রি করা শুরু করেন। এখন চার সদস্যের পরিবার চলছে মাছ বিক্রি করেই। ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে এখন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বলছিলাম সুন্দরবনের কোলঘেষা খুলনার কয়রা উপজেলার নজরুল ইসলাম সরদারের কথা।
এখন তিনি খুলনার মডেল মৎস্য বিক্রেতা। মৎস্য অফিসের পরিকল্পনায় ন্যায্য মূল্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মানসম্পন্ন নিরাপদ মাছ ক্রেতাদের পৌঁছে দিতে কয়রা মধুর মোড়ে মাছ বাজারে গড়ে তুলেছেন সোহাগ ফিস নামে প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) কয়রা উপজেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতার এই মডেল দোকানের উদ্বোধন করা হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম সরদার বলেন, কয়রা মাছের বাজারে খোলা স্থানে ঝুড়িতে মাছ বিক্রি করতাম। এখন উপজেলা মৎস্য অফিসের পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় আড়ৎ থেকে তাজা মাছ এনে বিক্রি শুরু করেছি। মানুষের সাড়া পাচ্ছি। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বিভিন্ন প্রজাতির তাজা মাছ সূলভ মূল্যে বিক্রি করছি। প্রত্যেকটি মাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি, ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো মাছ নিতে পারবে। প্রতিদিন ভোরে আড়ৎ থেকে মাছ এনে বেলা ১১টার মধ্যে বিক্রি করি।
তিনি বলেন, ছোট থেকেই মাছ ধরা ও বিক্রি করছি। পরিবারের অর্থের অভাবে লেখাপড়া তেমন করতে পারিনি। অনেক কষ্ট করেছি। ১৯৮৮ সালে মাছ বিক্রি শুরু করি। এখনও বিক্রি করছি। আর এই পেশায় আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চলে। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে খুলনা বিএল কলেজে লেখাপড়া করে। মেয়ে কয়রা গার্লস স্কুল থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। আমি লেখাপড়া করতে না পারলেও স্বপ্ন দেখি ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করবে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ক্ষুদ্র মডেল মাছ বিক্রেতা নজরুলের দোকানটি কিছু অংশ টাইলস করা, টিনের শেড, স্টেইনলেস স্টিলের ট্রে ও নাড়ানী, ওজন মাপার ডিজিটাল স্কেল, গামবুট পড়া, প্লাস্টিকের ফুডগৰেড ট্রেসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মাছ বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। তার দোকানের মতো আর কেউ এভাবে মাছ বিক্রি করেন না। আজ বুধবার নজরুলের প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম।
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আমিনুল হক বলেন, কয়রায় প্রথম মডেল ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতা নজরুল। মৎস্য অফিসের পরিকল্পনায় নজরুলকে কয়রা মধুর মোড়ে মাছ বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মাছ বিক্রির জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। নজরুলও রাজি হয়। সে এখন ভালো পরিবেশে মাছ বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, অনেকেই খোলামেলা পরিবেশে মাছ বিক্রি করে। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা নেই। নজরুল আগে বাজারে খোলা স্থানে মাছ বিক্রি করতো। এখন সে টাইলসের দোকানে মানসম্পন্ন মাছ বিক্রি করছে। সকালে আড়ৎ থেকে তাজা মাছ এনে তার দোকানে বিক্রি করছে। তার দেখাদেখি অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ভালো পরিবেশে মাছ বিক্রি করবে বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, কয়রার মানুষ যাতে নিরাপদ মাছ খেতে পারে, সেই জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগটির মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়।
খুলনা গেজেট/এমএম