যশোরের চৌগাছার গাছিরা খেজুরের নলেন গুড় প্রতি কেজি ৪শ টাকা দরে বিক্রি করছেন। শীতের শুরুতে গুড়ের আকাশ ছোঁয়া দামে এখনও স্বাদ নিতে পারেনি অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ।
সারা দেশের মত চৌগাছাতেও জেঁকে বসেছে শীত, প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন মানুষসহ প্রাণীকুল। শীত মৌসুম মানেই গ্রামের ঘরে ঘরে খেঁজুরের রস গুড় দিয়ে তৈরি হরেক রকমের খাবার তৈরির মহা উৎসব। কিন্তু চলতি শীতে এখনও গ্রামের বাড়িতে এর সাড়া ফেলতে পারেনি। অন্যতম কারণ যে কোনো বছরের তুলনায় চলতি শীতে খেঁজুরের রস গুড়ের আকাশ ছোঁয়া দাম। এ অঞ্চলের গাছিরা এবারের শীতের শুরুতে যে যেমন খুশি দামে রস ও গুড় বিক্রি শুরু করেছেন।
গত শীত মৌসুমে উপজেলাতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয় গুড় মেলা। উপজেলা চত্বরে গাছিরা গুড় বিক্রি করেন চড়া দামে, বেশ কিছু গাছি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে পেয়ে যান নগদ অর্থ আর সনদপত্র। গত বছর গুড় মেলাতে গাছিরা যে দামে গুড় বিক্রি করেছেন সেই ধারাবাহিকতা এ বছরও বজায় রাখার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।
উপজেলার বেলেমাঠ, কংশারীপুর, বাঘারদাড়িসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে অস্বাভাবিক দামে খেঁজুরের গুড় বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। বাঘারদাড়ি গ্রামের প্রতিষ্ঠিত গাছি লিয়াকত হোসেন। প্রতি বছরের মত এ বছরও তিনি শতাধিক খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছেন রস সংগ্রহের জন্য। ইতোমধ্যে তার প্রতিদিন ৪/৫ ঠিলা রস হচ্ছে গুড়ও হচ্ছে সন্তোষজনক। কিন্তু দাম গেল যে কোন বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি প্রতি কেজি নলেন গুড় বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত বছরে এই সময়ে ১ কেজি নলেন গুড় তিনি বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকায়। চলতি শীতে গুড়ের দাম কেন এতো বেশি জানতে চাইলে এই গাছি বলেন, সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই গুড়ের দামও তারা বৃদ্ধি করেছেন।
একই গ্রামের গাছি শওকত আলী বলেন, এক কেজি গুড় তৈরি করতে একজন গাছিকে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। নিয়মিত খেজুর গাছে ওঠা গাছ কাটা, কাক ডাকা ভোরে ওই গাছ হতে ঠিলে নিয়ে নিচে আসা এরপর রস নিয়ে বাড়িতে এসে তা দীর্ঘক্ষণ জ্বালিয়ে তারপর তৈরি করা হয় গুড়। সঠিক হিসেব করলে যে পরিমাণ পরিশ্রম সে পরিমাণ পারিশ্রমিক গাছিরা পায় না।
এ ছাড়া খেজুর গাছের চরম সংকট তো রয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সাইফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন জানান, এবছর খেজুরের রস গুড়ের যে দাম তাতে আমাদের মত মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব না। অনেকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে চলে আসছে খেজুর গাছ নিধন। গাছ কমে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রস গুড়ের ওপর।
খেজুর গাছ রোপণ এবং সেটি সংরক্ষণের পাশাপাশি গাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ইচ্ছা থাকলেও সামনের বছরগুলোতে খেঁজুরের রস গুড়ের স্বাদ সাধারণ মানুষ আর নিতে পারবে না।
খুলনা গেজেট/ এএজে