খুলনা সিটি করপোরেনের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত ক্লিনিক ও মাতৃসদনের সেবা কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট নগরীর ৭৩ ভাগ নাগরিক। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও ৭০ শতাংশ নাগরিক তা পান না। ক্লিনিক খোলা ও বন্ধের সময় নিয়েও সন্তুষ্ট নন ২৪ শতাংশ নাগরিক।
কেসিসির স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত সামাজিক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। চলতি বছরের ২১ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেসিসির নিয়ন্ত্রণে থাকা ২৭টি ক্লিনিক ও একটি নগর মাতৃসদনের ওপর এই জরীপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় জরিপটি পরিচালনা করেছে নাগরিক ফোরাম।
বৃহস্পতিবার নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেসিসি’র স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শ সভায় এই জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। এ সময় কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মীউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৭টিতে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৩টি মাতৃসদন আছে। এর মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে সূর্যের হাসি ক্লিনিক এবং ১২টি ওয়ার্ডে রংধনু ক্লিনিক রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ৩টি এনজিও এগুলো পরিচালনা করে। নগরীর ৮, ১৫ ও ২৯নং ওয়ার্ডে কোনো নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই।
এসব ক্লিনিকে সেবা নেওয়া নাগরিকরা অভিযোগ করেন, ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান যথাযথ না এবং চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল। সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে বেশি টাকা নেওয়া হয়, গর্ভবতী নারীদের টিটেনাস টিকা বেশি দামে কিনতে হয়, বস্তিবাসীরা অবজ্ঞার শিকার হন। ক্লিনিকগুলোতে বেশিরভাগ ওষুধই পাওয়া যায় না এবং দক্ষ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে।
পরামর্শ সভায় অংশ নেওয়া নাগরিকরা জানান, এনজিওদের মাধ্যমে পরিচালিত এসব ক্লিনিকে অব্যবস্থাপনার মূল কারণ কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের মনিটরিংয়ের অভাব। ক্লিনিকগুলোতে কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো ধরনের তদারকি নেই। যার কারণে দিন দিন অব্যবস্থাপনা বাড়ছে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর এই দুরাবস্থা। খুলনা মহানগরীর মানুষের করের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। তাদের দুর্ভোগ লাঘব করতে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন।
তিনি বলেন, খুলনা মহানগরীর মানুষের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। নগরীর স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সফল হবে না।
নাগরিক ফোরাম খুলনা মহানগরের সদস্য সচিব সেলিনা আক্তার পিয়ার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেসিসি’র প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না, আলী আকবর টিপু ও মেমোরী সুফিয়া রহমান শুনু, কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম ও রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ।