সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়ীয়ায় বহুদিনের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে ভবন নির্মাণের জোর পায়তারা চালাচ্ছেন শওকত আলী নামে এক ব্যক্তি। এর ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া, মাদরা ও পূর্ব ভাদিয়ালী মাঠের ২ হাজার বিঘা জমির ফসল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
বুধবার বিকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সোনাবাড়ীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে ভবন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জমির ভিট কাটা হয়েছে। যেখানে পানির ড্রেনের মধ্যেই করা হচ্ছে ৩টি স্তম্ভ। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখে ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন এলাকাবাসী। তারা জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমে এলাকাবাসীর ভোগান্তির অন্ত থাকে না। হাজার হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই পানি নিষ্কাশনের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তারা।
এলাকাবাসী আরও জানান, একজন ব্যক্তির কারণে হাজার হাজার কৃষকের জমির ফসল প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এসমস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বারবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও আজও সেটির স্থায়ী সমাধান পায়নি এলাকাবাসী। তবে, পানি নিস্কাশনের এই বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বেনজির হোসেন হেলাল দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ইউপি সদস্য মেহেরুল্লাহ বলেন, “কিছু অসাধু ব্যক্তি পায়তারা চালাচ্ছে এই ড্রেনটি বন্ধ করার। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন ব্যক্তির জন্য যেন হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
সাবেক ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বলেন,আমাদের বাপ-দাদাদের আমল থেকে এই জায়গা দিয়ে পানি পাশ্ববর্তী খালে গিয়ে নামছে। মাদরা, দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া, পূর্ব ভাদিয়ালী, এমনকি রাজপুর মাঠের একাংশের পানি এই ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন হয়। ড্রেনটি যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হাজার হাজার কৃষক চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান বেনজির হোসেন হেলাল বলেন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থে পানি নিস্কাশনের এই ড্রেনটি উন্মুক্ত হওয়া দরকার। এর আগে সোনাবাড়ীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পানির ড্রেনে মাটি ভরাট করেন জমি মালিক শওকত আলী। পরে বর্ষা মৌসুমে প্রচন্ড পানির চাপে এলাকাবাসীর গণদাবির প্রেক্ষিতে ড্রেনের মাটি সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বের করা হয়। তবে, বৃহৎ একটি মাঠের পানি ছোট ড্রেন দিয়ে সময় মতো নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়েন ওই এলাকার কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, “আমি ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি পাকা ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা করেছি। আশা করি আমরা খুব শীঘ্রই সেটি বাস্তবায়ন করতে পারব। তবে, তার আগে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে ভবন নির্মাণ বন্ধ, অথবা ভবনের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ রাখার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে উপজেলা নিবাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জনসাধারণের বৃহৎ স্বার্থে সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। অতিসম্প্রতি সেখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি পাকা ড্রেন তৈরির প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। দ্রæত ড্রেন তৈরি কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
জমির মালিক শওকত আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি পানি যাওয়ার পথটা রেখেই ঘর নির্মাণের কাজ করছি। দেড় ফুট জায়গা আমার ছাড় দেওয়া আছে।
ভবনের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখার দাবীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন,আমি কেন টাকা খরচ করে ঘরের নিচ দিয়ে ড্রেন রাখতে যাব? আমার জায়গায় আমি ঘর করছি, আমি কেন এত কিছু করতে যাব। তাছাড়া আমি পানি যাওয়া জন্য দেড় ফুট জায়গা ছেড়েই দিয়েছি।
শওকত আলীর ছেলে আক্তারুল ইসলাম বলেন, আমরা দেড় ফুট জমি ছেড়ে দিচ্ছি, পাশের জমি মালিকও যদি দেড় ফুট ছাড় দেয় তাহলে এই ৩ ফুট জায়গা নিয়ে ড্রেন তৈরি করলে পানি নিষ্কাশন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।