কেসিসি সুপার মার্কেটের এক কোনায় বসে জুতা পালিস করেন মাধব ঋষি। সামনেই খুলনা জেলা পরিষদ। ২৫ বছর এ পেশায় থাকলেও অভাব তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি দৈন্যতা তাকে আষ্টে পিষ্টে বেঁধে ফেলেছে।
রূপসা উপজেলার যুগিহাটি গ্রামে তার বসতি। পূর্ব পুরুষের কাজ জুতা সেলাই ও পালিস। কেসিসি মার্কেটের সামনে একই জায়গায় বসে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এর ফাঁকে তিনি বিয়ে করেছেন। সংসারে একটি ছেলে রয়েছে, দশ বছর বয়সী সাধব দাশ। যুগিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। মাধবের দিন ভালোই যাচ্ছিল। সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে দিনে তার চার থেকে পাঁচ শ টাকা আয় ছিল। সংসারের সব ব্যয় মিটিয়ে কিছু টাকা থাকতো। যা দিয়ে স্বপ্ন দেখতেন সন্তানকে নিয়ে।
কিন্তু এখন তার সংসারই চলছে না। করোনার ছোবলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। কাজ তেমন হয় না। খেয়ে না খেয়ে প্রায়ই দিন কাটাতে হয় তাকে। কথা হলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুঃখের কথা বলেন। মানুষের জুতায় ময়লা দেখলে তিনি খুশী হন। কারণ পরিস্কার করতে তার কাছে আসবেন। দু’টো পয়সা রোজগার করতে পারবেন। মাধবের ভাষায়, রাস্তায় মানুষ আসলে তার কিছু আয় হবে। রাস্তায় মানুষ আসে না, তাই জুতার খোঁজ তেমন পান না।
গত বছর করোনার সময় নানা বিধি-নিষেধের কারণে রাস্তায় মানুষ আসতে পারেনি। ওই সময়ে সংসারের অভাব কাঁটাতে তাকে সমিতির কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। সে টাকা এখনও শোধ করতে পারেনি। ঋণের টাকা দিতে না পারয় তাকে অপমান সহ্য করতে হয়। কিন্তু ধাপে ধাপে বিধি-নিষেধ কমার কারণে তার দিন ভালো চলছিল। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসন আবারও বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এখন তার জীবনে নেমে এসেছে বড় দুঃসময়। আয় নেই, ত্রাণও নেই!
খুলনা গেজেট/এনএম