খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ পৌষ, ১৪৩১ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  বুধবারের মধ্যে দাবি পূরনের আশ্বাসে সচিবালয়ের সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়েছে জবির শিক্ষার্থীরা, অব্যাহত থাকবে ক্যাম্পাস শাটডাউন
  প্রণয় ভার্মাকে ডাকার পরদিনই, দিল্লিতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে তলব
  জুলাই-আগস্টে গণহত্যা : প্রসিকিউশনের হাতে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড

করোনায় কমেছে পত্রিকা বিক্রি, পুঁজি হারিয়ে পেশা পাল্টাতে চায় হারেজ আলী

মেহেদী হাসান বাপ্পী

প্রাণঘাতি করোনার প্রভাব পড়েছে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ওপর। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব শ্রেণীর মানুষের আয় রোজগার এবং জীবনযাত্রায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। করোনার ধকল কিছুটা সামলে উঠলেও ক্ষত এখনো শুকায়নি।

মোঃ হারেজ আলী, পেশায় একজন পত্রিকা বিক্রেতা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে যারা নিয়মিত পত্রিকা নিতেন তাদের কাছে এক পরিচিত মুখ হারেজ। পত্রিকা বিক্রি করেই চালাতেন সংসার খরচ। গত বছর মার্চে করোনা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে হল ছেড়ে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে চলে যান। হঠাৎ করেই দুর্বিপাকে পড়ে যান হারেজ। খুবি’র পাঁচ হলে শিক্ষার্থীদের কাছেই তার পাওনা থেকে যায় ৪৩ হাজার টাকা। যার মধ্যে মাত্র ছয় শত টাকা হাতে পেয়েছেন তিনি।

অর্থের অভাবে ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে পারেনি হারেজ আলী। সেই থেকে সংসারের হাল ধরতে বাবার হাত ধরেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। তার বাবা হায়দার আলীও ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্রিকা পরিবেশক। পাঁচ সদস্যের পরিবারে হারেজ আলীই এখন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মা দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছেন ক্যান্সারে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় সাত লক্ষ টাকা। কোথায় পাবেন এতো টাকা হারেজ!

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকা অবস্থায় দেশের বহুল প্রচারিত একটি বাংলা জাতীয় দৈনিকের ১৮০ কপি বিক্রি হতো, যেটি নেমে এসেছে মাত্র ৪৫ কপিতে, ইংরেজি জাতীয় দৈনিক বিক্রি করতেন ৩০ কপি, যা এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ কপি। এভাবে সবগুলো জাতীয় এবং আঞ্চলিক পত্রিকারই বিক্রি কমেছে। পত্রিকা বিক্রি করে এখন মাসে আয় হয় মাত্র ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা, যা দিয়ে তার সংসার চালাতে হিমমিম খেতে হচ্ছে। বাড়তি আয়ের জন্য দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে খুলনার সাত নম্বর ঘাটের একটি কফি শপে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন। খুলনা গেজেটের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

যাদের কাছে পত্রিকা বিক্রি করতেন তাদের নাম বা মোবাইল নম্বর আছে কিনা জানতে চাইলে হারেজ বলেন, “আমি তো হলের রুম নাম্বারগুলো মনে রাখতাম, যারা পত্রিকা নিতো তাদের নাম, নম্বর বা ডিসিপ্লিন কখনো জানতে চাইনি। তাছাড়া কিছু কিছু রুমে তো সবাই মিলে একটা পত্রিকা রাখতো। মাস শেষ হলে টাকা দিয়ে দিতো। করোনা শুরু হলে সবাই বাড়িতে চলে যায়, আমার ৪৩ হাজার টাকা বাকি পড়ে যায়।”

বাবার হাত ধরে শুরু করা দীর্ঘ দিনের এই পেশা হারেজ এখন পরিবর্তন করতে চায়। কারণ করোনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমেছে পত্রিকার বিক্রি, পাশাপাশি তার স্বল্প পুঁজি পরিস্থিতির কারণে আটকা পড়েছে। যা আদৌ আর ফিরে পাবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান হারেজ।

 

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!