খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
একদিনে মৃত্যু ৭, শনাক্তের হার প্রায় ৬৫ শতাংশ

করোনার নতুন হট স্পট যশোর, হাসপাতালে বেডের জন্য হাহাকার

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

করোনার হটস্পট এখন যশোর। জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগী। গড় শনাক্তের হার প্রায় ৬৫ শতাংশ। প্রতিটি ঘরে ঘরেই করোনা উঁকি দিয়েছে। গ্রামগঞ্জের সবস্থানে সর্দি-কাশি ও জ্বরের রোগীর দেখা মিলছে। তাদের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন কারো আগ্রহ নেই। বর্তমানে হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় চারগুণ বেড়েছে। জেনারেল হাসপাতালের রেড ও ইয়োলোজোনো ওয়ার্ডে সিট খালি না থাকায় রোগী ও স্বজনরা হাহাকার করছেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া মহিলা রোগীদের জন্য ইয়োলোজোন ৯টি এবং পুরুষদের জন্য ১০টি বেড রয়েছে। এই ১৯ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৬১ জন। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় আক্রান্ত রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন প্রতিদিন। হাসপাতাল চত্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হওয়ার চিত্র এখন নিত্যদিনের ঘটনা। হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি আছেন একশ’ তিন জন। এই ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ৭৯টি। এখানেও অতিরিক্ত রোগী অবস্থান করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গ্রামের রোগী হাসপাতালে দেরিতে আসছেন। রোগের তথ্য গোপন করে তারা বাড়িতে থাকছেন। অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে তখনই হাসপাতালে ছুটছেন। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় যশোর হাসপাতালের রেড ও ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন আরও সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দু’জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং পাঁচ জন উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এদিন যশোর জেলায় নতুন করে দুইশ’ ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দু’জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ২২১ জন। হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি আছেন একশ’ তিন জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে ইয়েলো জোনে ভর্তি আছেন আরও ৬১ জন।

সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডাক্তার রেহেনেওয়াজ জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে সাতশ’ আটটি নমুনা পরীক্ষায় দুইশ’ ১৭ জন ও জিন এক্সপার্টে পাঁচটি নমুনা পরীক্ষায় চার জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় একশ’ ১৭ জন, কেশবপুরে ২০, ঝিকরগাছায় ৩০, অভয়নগরে ১৯, বাঘারপাড়ায় ছয়, মণিরামপুরে তিন, শার্শায় ২০ ও চৌগাছায় পাঁচ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১২ হাজার সাতশ’ ৫৭ জন। সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার চারশ’ ৫৯ জন। মৃত্যু হয়েছে একশ’ ৫৪ জনের।

মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের মনিরুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রীকে মণিরামপুরে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে যশোরে ছুটে এসেছেন। তার স্ত্রীর অক্সিজেন লেভেল ৮৩ থেকে ৮৫ এর মধ্যে উঠানামা করছে। দ্রুত তার চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ইউনিটে সিট খালি নেই। তাই ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা চলছে।

শহরতলীর বাহাদুরপুর গ্রামের আলেয়া বেগম জানান, তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। গত ৩০ জুন করোনা পরীক্ষার জন্য তিনি নমুনা দেন। ২ জুলাই তার করোনা নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। কিন্তু ডাক্তার তাকে হাসপাতালের ইয়োলোজেনো ভর্তি থাকতে বলেছেন। বেড খালি না থাকায় তিনি বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। তার মতো বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা রোগীরা শয্যা খালি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান জানান, প্রতিদিন রেড ও ইয়োলোজোনে বেডের তুলনায় দ্বিগুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সব থেকে খারাপ অবস্থা ইয়োলোজোনে। প্রতিদিন সেখানে গড়ে ৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু সেখানে শয্যা মাত্র ১৯টি। শয্যা বাড়াতে তিনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কথা বলেছেন।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!